সমীক্ষা বলছে, পুরুষরাই দেশের ৫০ শতাংশ বন্ধ্যাত্বের জন্য দায়ী

এক নতুন সমীক্ষা অনুসারে, আমাদের দেশে পুরুষরাই প্রায় ৫০ শতাংশ বন্ধ্যাত্বের জন্য দায়ী। আধুনিক জীবনযাত্রার আমূল পরিবর্তন এবং অনিয়মিত রুটিনের কারণে বিভিন্ন রোগব্যাধির পাশাপাশি বন্ধ্যাত্বের সমস্যাও বাড়ছে। এই অনিয়মিত জীবনযাত্রার ফলে পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাচ্ছে এবং একই সাথে শুক্রাণুর গুণগত মানও খারাপ হচ্ছে।

এই সমস্যা প্রায় প্রতিটি উন্নত দেশেই দেখা যাচ্ছে। সাধারণভাবে, প্রতি সিসি সিমেনে ২০ মিলিয়ন বা তার বেশি শুক্রাণু থাকলে পুরুষদের বাবা হতে কোনো অসুবিধা হয় না। তবে, যখন শুক্রাণুর সংখ্যা ১০ মিলিয়নেরও নিচে নেমে যায়, তখন সমস্যা গুরুতর আকার ধারণ করে।

পরিসংখ্যান বলছে, ভারতবর্ষে প্রতি ছয় জোড়া দম্পতির মধ্যে এক জোড়া এই বন্ধ্যাত্বের সমস্যায় ভুগছেন। উদ্বেগের বিষয় হলো, শহরাঞ্চলে এই সমস্যা তুলনামূলকভাবে বেশি। ইন্ডিয়ান সোসাইটি ফর অ্যাসিস্টেড রিপ্রোডাকশন (আইএসএআর)-এর হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ভারতে মোট নিঃসন্তান দম্পতির সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৭৫ লক্ষ। ঐতিহাসিকভাবে, এই নিঃসন্তানতার জন্য মূলত নারীদেরকেই দায়ী করা হতো। তবে, সাম্প্রতিক গবেষণা সেই ধারণা ভুল প্রমাণ করেছে। বর্তমানে পুরুষদের মধ্যেও সন্তান উৎপাদনের ক্ষমতা ক্রমশ কমছে।

একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, বন্ধ্যাত্বের সমস্যা নারীদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে ১.৫ শতাংশ বেশি। ভারতবর্ষে প্রতি বছর প্রায় ১২ থেকে ১৮ মিলিয়ন দম্পতি এই সমস্যার সম্মুখীন হন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) মতে, ভারতে বন্ধ্যাত্বের প্রায় ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রেই পুরুষরাই দায়ী।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্ট্রেস বা মানসিক চাপ পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের অন্যতম প্রধান কারণ। এর পাশাপাশি, অতিরিক্ত ধূমপান, মদ্যপান এবং পর্যাপ্ত শরীরচর্চার অভাব এই সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। অতিরিক্ত ওজন বা পেটে মেদ জমলেও শুক্রাণুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে পারে।

এছাড়াও, অতিরিক্ত তাপমাত্রাও শুক্রাণুর উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে কোলে ল্যাপটপ রেখে কাজ করলেও শুক্রাণুর সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

কোনো আঘাত বা কিছু বিশেষ ওষুধ ব্যবহারের ফলেও শুক্রাণুর সংখ্যা কমতে পারে। এই সমস্যা দেখা দিলে, শুধুমাত্র চিকিৎসা করাই যথেষ্ট নয়, পাশাপাশি নিজের জীবনযাত্রারও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা জরুরি। ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে এবং নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে। এছাড়াও, সঠিক পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা অত্যন্ত আবশ্যক।

এই বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করলে অনেক দম্পতিই এই সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হবেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy