সকাল শুরু মানেই এক কাপ গরম চা, এই অভ্যাস আমাদের অনেকেরই। চা প্রেমীদের মধ্যে একটা বড় অংশ আবার দুধ চা ছাড়া দিন শুরু করার কথা ভাবতেই পারেন না। ঘুম থেকে উঠেই ফ্রেশ হয়ে হাতে গরম দুধের কাপ, এই দৃশ্য অতি পরিচিত। কিন্তু এই আরামদায়ক অভ্যাসটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী, নাকি বিপজ্জনক, তা কি আপনি জানেন?
চা: একাধারে বন্ধু, একাধারে শত্রু!
এ কথা অনস্বীকার্য যে, চা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের এক অফুরন্ত ভাণ্ডার। এই উপাদান শরীরে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং চায়ে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা মস্তিষ্কে ‘হ্যাপি হরমোন’ ক্ষরণ বাড়ায়। তাই চা পান করলে মন ফুরফুরে হয় এবং কাজে মনোসংযোগও বাড়ে।
তবে, সমস্যাটা শুরু হয় যখন এই চা খালি পেটে, বিশেষ করে দুধ মিশিয়ে পান করা হয়। ভারতের বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ কোয়েল পাল চৌধুরি সম্প্রতি এই বিষয়ে কঠোর সতর্কতা জারি করেছেন। তাঁর মতে, খালি পেটে দুধ চা পান করার অভ্যাস গ্যাস-অ্যাসিডিটির প্রকোপ বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। এমনকি এটি ক্রনিক গ্যাস্ট্রাইটিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার ঝুঁকিও বাড়াতে পারে। তাই এই অভ্যাসটি দ্রুত ত্যাগ করা বুদ্ধিমানের কাজ।
লিকার চা: দুধ চায়ের স্বাস্থ্যকর বিকল্প
কোয়েল পাল চৌধুরি জোর দিয়ে বলেন, দুধ চা পানের তুলনায় লিকার চা পান করা বহুগুণে স্বাস্থ্যকর। তাঁর মতে, সকালে খালি পেটে লিকার চা পান করলে শারীরিক সমস্যার ফাঁদে পড়ার ঝুঁকি প্রায় থাকে না বললেই চলে। তবে লিকার চায়েও বেশি চিনি মেশানোর ভুল করবেন না। এই ছোট পরিবর্তনটি আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক হবে।
কখন পান করবেন দুধ চা?
যদি দুধ চা ছাড়া আপনার না চলে, তবে এরও একটি স্বাস্থ্যকর উপায় আছে। পুষ্টিবিদদের পরামর্শ অনুযায়ী, খাবার খাওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট পরে এক কাপ দুধ চা পান করতে পারেন। এতে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা অনেকটাই কমবে। আর দুধ চা তৈরির ক্ষেত্রে অবশ্যই লো ফ্যাটযুক্ত দুধ ব্যবহার করুন। এই নিয়ম মেনে চললে একদিকে যেমন ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে, তেমনই কোলেস্টেরলও বশে থাকবে।
দিনে কত কাপ চা? শরীরের সীমাকে সম্মান করুন!
চা যত উপকারীই হোক না কেন, অতিরিক্ত সেবন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক। বিশেষজ্ঞদের মতে:
রং চা (লিকার চা): দিনে ৩-৪ কাপ পর্যন্ত পান করা যেতে পারে।
দুধ চা: ২ কাপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখুন।
এর বেশি রং চা বা দুধ চা পান করলে কেবল গ্যাস, অ্যাসিডিটি নয়, লিভার ও কিডনির মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গেরও ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। এমনকি অতিরিক্ত চা পান দুশ্চিন্তা ও অবসাদ বাড়াতে পারে।
সুতরাং, আপনার প্রিয় চা পান করার অভ্যাসটি ধরে রাখুন, তবে সেটি যেন হয় সচেতন ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে। সকালে দুধ চা বর্জন করে সুস্থ থাকার দিকে এক ধাপ এগিয়ে যান!