শিশুদের সুস্থ রাখতে অভিভাবকের হাতেই সুরক্ষা কবচ!

তীব্র দাবদাহের রুক্ষতা শেষে স্বস্তির পরশ নিয়ে এসেছে বর্ষা। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি, ভেজা বাতাস – এক দারুণ ভালোলাগার আবহ। কিন্তু ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে প্রকৃতি যেমন মনোরম, তেমনই শিশুদের জন্য লুকিয়ে থাকে নানা স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি। বড়দের পাশাপাশি ছোটদের সুস্থ রাখা এই সময়টায় যেন এক বাড়তি চ্যালেঞ্জ!

বর্ষার আর্দ্র আবহাওয়া আর মশার উপদ্রব শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য এক বড় বিপদ ডেকে আনে। ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ফ্লু, বা বিভিন্ন ভাইরাসঘটিত রোগের পাশাপাশি পেশি ও জয়েন্টের ব্যথা, কলেরা, এবং ডায়রিয়ার মতো জলবাহিত রোগগুলোও এই সময়টায় ব্যাপক আকার ধারণ করে। অনেক শিশুই বর্ষায় ঠান্ডা-জ্বর-কাশিতে ভোগে। তাই রোগের আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য ঘরোয়া উপায় এবং কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা একান্ত জরুরি।

চলুন জেনে নিই, বর্ষায় আপনার সোনামণিকে সুস্থ ও সুরক্ষিত রাখতে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন:

১. পুষ্টিতে ভরপুর খাবার: প্রতিরোধের মূলমন্ত্র
বর্ষায় শিশুদের বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে তাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার রাখা আবশ্যিক। ভিটামিন ও মিনারেল যুক্ত বিভিন্ন ফলমূল, যেমন – পেঁপে, আম, কলা, এবং টাটকা শাক-সবজি শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক। নিশ্চিত করুন যে তাদের খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ, বি এবং সি বিদ্যমান থাকে।

২. বাইরের খাবার: ‘না’ বলুন দ্বিধা ছাড়াই
এই সময়ে শিশুকে বাইরের খোলা বা অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন। কলেরা ও টাইফয়েডের মতো রোগের জীবাণু খোলা খাবারে সহজেই বাসা বাঁধতে পারে। তাই শিশুকে সব সময় টাটকা ও গরম খাবার পরিবেশন করুন।

৩. বিশুদ্ধ জলের গুরুত্ব: রোগমুক্তির পথ
শিশুকে সব সময় ফোটানো জল ঠান্ডা করে পান করান। ছোট শিশুদের দুধ তৈরির সময় অবশ্যই ফোটানো জল ব্যবহার করুন। জলবাহিত রোগগুলো থেকে শিশুকে বাঁচাতে বিশুদ্ধ জলের কোনো বিকল্প নেই।

৪. পরিচ্ছন্ন বাসস্থান: স্বাস্থ্যকর পরিবেশ
শিশুর থাকার ঘর সব সময় শুকনো ও পরিষ্কার রাখুন। ঘর যেন কোনোভাবেই স্যাঁতসেঁতে না থাকে। ঘরে নিয়মিত আলো-বাতাস প্রবেশ করে তা নিশ্চিত করুন। ঘরের চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখুন, যাতে মশার লার্ভা জন্মাতে না পারে। বৃষ্টির সময় শিশুকে বাইরে বের না হতে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

৫. নিয়মিত স্নান: পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ভিত্তি
বর্ষায় তাপমাত্রা তুলনামূলক ঠান্ডা থাকায় অনেক শিশুর গোসলে অনীহা দেখা যায়। তবে নিয়মিত গোসল করানো এই সময়টায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দিনের সবচেয়ে উষ্ণ সময়ে বাচ্চাদের হালকা গরম জল দিয়ে গোসল করান। গোসলের জলে কয়েক ফোঁটা ডেটল বা স্যাভলন অ্যান্টিসেপটিক লিকুইড মিশিয়ে দিতে পারেন।

৬. শুকনো পা ও সুরক্ষিত পোশাক: বাড়তি সতর্কতা
শিশুদের পা সব সময় শুকনো রাখুন। বর্ষায় ঘরের ভেতরে সবার স্লিপার ব্যবহার করা উচিত। মশা থেকে অতিরিক্ত সুরক্ষার জন্য শিশুকে এমন পোশাক পরান যা তাদের পুরো শরীর ঢেকে রাখে। সুতির পোশাক এই সময়ের জন্য আরামদায়ক।

৭. মশারী ও নিরোধক: রাতের সুরক্ষায়
ঘুমানোর সময় শিশুকে অবশ্যই মশারীর ভেতরে রাখুন। ভালো মানের মশা নিরোধক স্প্রে বা কয়েল ব্যবহার করতে পারেন, তবে শিশুদের জন্য নিরাপদ এমন পণ্যই বেছে নিন।

৮. চিকিৎসকের পরামর্শ: যখন প্রয়োজন
প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, তবে এটিই শেষ কথা নয়। যদি আপনার শিশুর ফ্লু বা অন্য কোনো সংক্রমণের লক্ষণ দেখা যায়, বিশেষ করে জ্বর বা কাশি বেড়ে গেলে, তাহলে দেরি না করে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। দ্রুত চিকিৎসা রোগকে জটিল হতে দেয় না।

এই বর্ষায় আপনার সন্তান সুস্থ থাকুক, হাসি-খুশিতে ভরে উঠুক প্রতিটি দিন!

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy