অতিরিক্ত কাজের চাপ, সময়ের অভাব, ঘুমের ঘাটতি এবং দুশ্চিন্তা— এগুলি আমাদের আধুনিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত লক্ষ্য পূরণে নিরন্তর ছুটে চলার ফলে মানসিক চাপ যেন নিত্যসঙ্গী। অনেকেই মনে করেন, মানসিক চাপ মানে শুধু মন খারাপ বা ক্লান্তি। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন: মানসিক চাপ কেবল মনের অনুভূতিতে সীমাবদ্ধ নয়, এর গভীর প্রভাব পড়ে শরীরের প্রায় প্রতিটি অঙ্গের ওপর।
মানসিক চাপ বাড়লে শরীরে ‘স্ট্রেস হরমোন’ নামে পরিচিত কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। এই হরমোন স্বল্প পরিমাণে উপকারী হলেও, অতিরিক্ত পরিমাণে নিঃসৃত হলে শরীরে নানা নেতিবাচক পরিবর্তন দেখা দেয়। তখন মুখে না বললেও শরীরই স্পষ্ট জানিয়ে দেয় যে আপনি মানসিক চাপে আছেন।
কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বাড়লে শরীরে যে ৪টি প্রধান পরিবর্তন হয়, তা নিচে আলোচনা করা হলো:
১. মুখ ও পেটে দ্রুত মেদ জমে
মানসিক চাপের কারণে ওজন বাড়ে, যা অনেকেই জানেন না। অতিরিক্ত স্ট্রেসের ফলে কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা চর্বি জমার প্রবণতা বাড়ায়। এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে পেট ও মুখের গালের অংশে। অতিরিক্ত মানসিক চাপ অন্ত্রে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়া নষ্ট করে দেয়, ফলে হজমের সমস্যা ও গ্যাস বেড়ে যায়। একই সঙ্গে বিপাক হার (Metabolism) কমে গিয়ে শরীরের ক্যালোরি পোড়ানোর ক্ষমতা হ্রাস পায়। এর ফলে শরীর ফুলে ওঠে, মুখে ভারী ভাব আসে ও পেটে অনিয়ন্ত্রিতভাবে মেদ জমতে থাকে।
২. বয়সের আগেই ত্বকে আসে বার্ধক্য
মানসিক চাপ ত্বকের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। স্ট্রেস বাড়লে কর্টিসল হরমোন শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কোলাজেন ভেঙে দেয়। ফলে ত্বক ঢিলা হয়ে যায়, বলিরেখা স্পষ্ট হয় এবং মুখ-চোখ ফ্যাকাশে দেখায়। এছাড়া ত্বকের তেল নিঃসরণ বেড়ে গিয়ে ব্রণ ও র্যাশের প্রবণতা বাড়ে। ত্বকের ক্ষত বা দাগ সহজে ভালো হয় না এবং ত্বক অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। তাই মানসিক চাপ দীর্ঘস্থায়ী হলে বয়সের আগেই ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ দেখা দিতে পারে।
৩. চুল পাতলা হয়ে যায় এবং নতুন চুল গজায় না
কর্টিসল হরমোন আপনার চুলের সৌন্দর্যও কেড়ে নিতে পারে। এটি চুলের বৃদ্ধিতে বাধা দেয়, ফলে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক দ্রুত চুল পড়তে শুরু করে। অনেক সময় মাথার নির্দিষ্ট জায়গায় টাক পড়ে যায়। অতিরিক্ত স্ট্রেসের কারণে রক্তসঞ্চালন ব্যাহত হয় এবং চুলের ফলিকল পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় না। এর ফলে নতুন চুল গজানো বন্ধ হয়ে যায় এবং পুরোনো চুল দ্রুত পাতলা হয়ে পড়ে।
৪. শরীরের গঠনে পরিবর্তন আসে
অতিরিক্ত মানসিক চাপ শরীরের গঠনেও পরিবর্তন আনতে পারে। কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বেড়ে গেলে পেশির ক্ষয় হতে শুরু করে। এর ফলে হাত, পা ও কাঁধের পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হয়। দীর্ঘ সময়ে মানসিক চাপে থাকার ফলে ধীরে ধীরে শরীর সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে, ঘাড় ও পিঠে ব্যথা হয় এবং সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। শরীরের শক্তি ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দেওয়ায় কাজ করার আগ্রহ বা শক্তি কমে যায়।
এই পরিবর্তনগুলোই শরীরকে বলে দেয় যে, আপনি মানসিক চাপে আছেন। তাই সময় থাকতে শরীরের এই সংকেতগুলো বুঝে নিন এবং নিজের প্রতি যত্নশীল হোন।