রোগা হওয়ার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ আপনি। সেই সঙ্গে বশে রাখতে চান সুগার, প্রেশার, কোলেস্টেরল এবং থাইরয়েডের মতো সমস্যাগুলিকেও। তাই হয়তো কঠোর ডায়েট মেনে চলছেন এবং শরীরচর্চাকেও রুটিনের অঙ্গ করে তুলেছেন। কিন্তু এত কিছু করেও মাঝে মাঝেই কি ক্লান্তিতে শরীর ভেঙে পড়ছে? অফিসের কাজ হোক বা বন্ধুদের সাথে আড্ডা, কোনও কিছুতেই যেন আর উৎসাহ পাচ্ছেন না?
বিশেষত যারা এই নতুন পথচলার শুরুতেই রয়েছেন, তাদের মধ্যে এই সমস্যাগুলো বেশি দেখা যায়। একটু খতিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে এর প্রধান কারণ হল খাওয়াদাওয়ার ভুল নিয়ম। জিমে বা যোগা ক্লাসে যাওয়ার আগে অতিরিক্ত খাবার খাওয়া যেমন উচিত নয়, তেমনই একেবারে খালি পেটে ব্যায়াম করার অভ্যাস আরও ক্ষতিকর। সঠিকভাবে শরীরচর্চা করার জন্য শরীরের কিছুটা হলেও জ্বালানির প্রয়োজন। কিন্তু কী করে বুঝবেন যে আপনিও একই সমস্যায় ভুগছেন?
ব্যায়ামের ক্লাসেই কি ক্লান্তিতে শরীর ছেড়ে দিচ্ছে?
যদি একেবারে খালি পেটে মাঝারি থেকে ভারী ব্যায়ামও করেন, তাহলে রক্তে শর্করার মাত্রা আচমকা কমে যেতে পারে। এর ফলে মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। শুধু তাই নয়, ট্রেডমিলে দৌড়ানো বা অন্য কোনও ধরণের কার্ডিও ব্যায়াম করতেও সমস্যা হবে। এমনকি ঘন ঘন চোট লাগার সম্ভাবনাও থাকে।
তাহলে ব্যায়ামের আগে কী খাওয়া উচিত?
শরীরের জন্য কার্বোহাইড্রেট হল শক্তির প্রধান উৎস। তাই খাদ্যতালিকা থেকে কার্বোহাইড্রেট একেবারে বাদ দিলে শরীরে শক্তির অভাব দেখা দিতে বাধ্য। অনেকেই দ্রুত ওজন কমানোর জন্য খাবার থেকে নুন একেবারে ছেঁটে ফেলেন। কিন্তু সোডিয়াম একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইলেকট্রোলাইট এবং আমাদের স্নায়ু ও পেশীর কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে এর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। ব্যায়ামের সময় ঘামের সাথে সোডিয়াম বেরিয়ে যায়, তাই খাবারের মাধ্যমে সেই ঘাটতি পূরণ না করলে বিপদ হতে পারে। তবে মনে রাখবেন, ব্যায়ামের অন্তত আধ ঘণ্টা আগে হালকা খাবার শেষ করতে হবে। ভারী খাবার খাওয়ার পর অন্তত দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করা জরুরি।
ওয়ার্কআউটের আগে নিশ্চিন্তে খেতে পারেন এই খাবারগুলি:
কলা: পটাসিয়াম এবং কার্বোহাইড্রেটে ভরপুর কলা আপনার পেশিগুলিকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগাতে সাহায্য করে।
ওটস: বিশেষ করে রোলড ওটসে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা দীর্ঘক্ষণ আপনার শরীরে শক্তি যোগায়।
গ্রিলড চিকেন: গ্রিলড চিকেন প্রোটিনের একটি স্বাস্থ্যকর উৎস। এতে অতিরিক্ত তেল মশলাও থাকে না, তাই ব্যায়ামের আগে অল্প পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে। তবে মনে রাখবেন, সাধারণত গ্রিলড চিকেনের সাথে সবজি থাকে এবং এটি বেশ ভারী হতে পারে। তাই ভারী খাবার খাওয়ার অন্তত দেড় ঘণ্টা পর ব্যায়াম করা উচিত।
ডিম: সেদ্ধ বা পোচ ডিম প্রোটিনের খুব ভালো উৎস। তবে তেল বা মাখন দিয়ে ভাজা ডিম এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
ফল, বাদাম, ড্রাই ফ্রুট: তাজা বা শুকনো ফলে থাকে সরল শর্করা এবং বাদাম ফ্যাটের একটি স্বাস্থ্যকর উৎস। তবে নুন দিয়ে ভাজা বাদাম একেবারেই খাওয়া উচিত নয়।
দই/ ছানা/ দুধ: এই খাবারগুলো প্রোটিনের চমৎকার উৎস। ব্যায়ামের আগে দই বা দুধের সাথে ফল মিশিয়ে স্মুদি বানিয়েও খেতে পারেন।
তাই রোগা হওয়ার পথে তাড়াহুড়ো না করে সঠিক নিয়ম মেনে চলুন। ব্যায়ামের আগে সঠিক খাবার খান এবং শরীরকে পর্যাপ্ত শক্তি দিন। এতে ক্লান্তিও কমবে এবং শরীরচর্চাও হবে আরও ফলপ্রসূ।