কর্মব্যস্ত জীবনে মুড সুইং বা মেজাজের ঘন ঘন পরিবর্তন একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সকালে হয়তো মন খুব ভালো ছিল, হঠাৎ করেই বিনা কারণে মন খারাপ হয়ে গেল, অথবা হুট করে রেগে গেলেন। এমনটা কি আপনার সাথেও ঘটে? মনোবিদরা বলছেন, এই ঘন ঘন মেজাজ পরিবর্তনকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় মুড সুইং (Mood Swing) বলা হয়।
আশ্চর্যের বিষয় হলো, একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের ঘন ঘন মেজাজ পরিবর্তন হয়, তাদের মস্তিষ্ক নাকি খুব তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এমনকি বিভিন্ন সমস্যার সমাধান বা কোনো পরিকল্পনা তাৎক্ষণিকভাবে করতে পারে। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এই ইতিবাচক দিকটি সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় না। বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই বারবার মেজাজ পরিবর্তন হওয়ার ফলাফল বেশ বিপজ্জনক হতে পারে।
মনোবিদরা সতর্ক করছেন যে, শুরুর দিকেই যদি মুড সুইংয়ের সমস্যার সমাধান না করা যায়, তাহলে এটি বাইপোলার ডিসঅর্ডার (Bipolar Disorder) বা দ্বৈত সত্তার মতো জটিল ও গভীর মানসিক রোগে রূপান্তরিত হতে পারে।
মুড সুইংয়ের কারণ কী?
আমাদের মস্তিষ্কে বেশ কিছু নিউরোট্রান্সমিটার (Neurotransmitter) থাকে, যা থেকে হরমোন ক্ষরণ হয়। এর মধ্যে সেরোটোনিন (Serotonin) এবং নরপাইনফ্রাইন (Norepinephrine) খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথমটি আমাদের ঘুমের ধরন, বিভিন্ন মানসিক স্থিতি এবং আবেগের ওঠাপড়ার সঙ্গে জড়িত।
আর দ্বিতীয়টির সম্পর্ক স্মৃতি, কোনো কিছু শেখার দক্ষতা এবং শারীরিক চাহিদার সঙ্গে।
এই হরমোনগুলোর তারতম্যের কারণেই মুড সুইং হতে পারে। এছাড়াও, মানসিক চাপ (Stress), অ্যাংজাইটি (Anxiety), অবসাদ বা ডিপ্রেশন (Depression), মদ্যপান (Alcohol Consumption), ঘুমের অভাব (Lack of Sleep), বাইপোলার ডিসঅর্ডার (Bipolar Disorder), প্রিমেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম (Premenstrual Syndrome) এবং কাজের চাপ (Work Pressure) সহ বিভিন্ন কারণে মুড সুইং হতে পারে।
কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন মুড সুইং?
মুড সুইং নিয়ন্ত্রণ করতে কিছু সহজ নিয়ম মেনে চলতে পারেন:
১. পর্যাপ্ত ঘুম: দৈনিক অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো জরুরি।
২. পর্যাপ্ত জল পান: প্রতিদিন ৩-৪ লিটার জল পান করুন।
৩. সঠিক ডায়েট: সুষম ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন।
৪. স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন: একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করুন।
৫. নিয়মিত ব্যায়াম: প্রতিদিন শারীরিক কসরত বা ব্যায়াম করুন।
মুড সুইংয়ের কারণে অতিরিক্ত রাগ বা নেতিবাচক অনুভূতি মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরাট প্রভাব ফেলতে পারে। যদি এই সমস্যা বেশি বাড়তে থাকে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হওয়া সুস্থ জীবনের জন্য অপরিহার্য।