মুড়ি, বাঙালির চটজলদি জলখাবার থেকে বৈদিক যুগের নৈবেদ্য, জানুন এর অজানা স্বাস্থ্যগুণ!

বাঙালির ঘরে মুড়ি এক পরিচিত জলখাবার। চটজলদি ক্ষুধা নিবারণ থেকে শুরু করে সন্ধ্যায় আড্ডার সঙ্গী – মুড়ি তার সহজলভ্যতা আর উপাদেয়তার জন্য সর্বত্র সমাদৃত। রাজপ্রাসাদ থেকে সাধারণ মানুষের উঠোন, এমনকি আধুনিক ডায়েট চার্টেও ‘পাফড রাইস’ (মুড়ি) অবাধ যাতায়াত। ছোটবেলায় জলমুড়ি খাননি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কিন্তু এই সাধারণ খাবারটির অসাধারণ পুষ্টিগুণ এবং এর সমৃদ্ধ ইতিহাস সম্পর্কে আমরা ক’জনই বা জানি?

মুড়ির প্রাচীন ইতিহাস ও বিবর্তন
মুড়ির ইতিহাস খুঁজতে গেলে আমাদের ফিরে যেতে হবে আদিম বৈদিক যুগে। সেই সময় দেবতাদের নৈবেদ্য হিসেবে ‘চালভাজা’ নিবেদন করা হতো, আর এই চালভাজাই হলো মুড়ির আদিরূপ। ধারণা করা হয়, হিব্রু নাম্নী এক যাযাবর জাতি ভ্রমণের সময় শুকনো খাবার হিসেবে ঝলসানো মাংস এবং ‘পিপিজেওরেজ’ (মুড়ি) সঙ্গে রাখত। ভারতের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, মগধ শাসনকাল থেকেই এই উপমহাদেশে মুড়ি খাওয়ার চল রয়েছে।

সময়ের সাথে সাথে মুড়ি খাওয়ার ধরনেও এসেছে নানা পরিবর্তন। নবাবদের জন্য মুড়ির মধ্যে মেশানো হতো বিভিন্ন মশলা, যা থেকে জন্ম নেয় আজকের জনপ্রিয় ‘ঝাল মুড়ি’। নারকেল মুড়ি, মুড়ি-চানাচুর, আর মুড়ি-মাংস – একেকজন একেক রকমভাবে মুড়ি খেতে ভালোবাসেন। এমনকি মুড়িকে কেন্দ্র করে মাঘ মাসের ৪ তারিখে বাঁকুড়ায় এক আস্ত মেলাও বসে।

মুড়ির স্বাস্থ্য উপকারিতা: রোগ প্রতিরোধ থেকে হজমে সহায়তা
মুড়ি শুধু সুস্বাদু নয়, এটি পুষ্টিগুণেও ভরপুর। এতে থাকা ভিটামিন ‘বি’ এবং মিনারেল আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। পেটের যেকোনো সমস্যায় ‘জলমুড়ি’ একটি অব্যর্থ পথ্য হিসেবে বিবেচিত। যাদের হজম ও অ্যাসিডিটির সমস্যা রয়েছে, চিকিৎসকরাও তাদের নিয়মিত মুড়ি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

আশ্চর্যজনকভাবে, আধুনিক ডায়েট চার্টের অন্তর্গত এই মুড়ি আমাদের পেট ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। এটি সহজপাচ্য এবং শরীরকে সতেজ রাখে। তাই অরুচি আর নয়! আজ থেকেই সকাল-সন্ধ্যার জলখাবারে মুড়িকে সঙ্গী করতে ভুলবেন না। এটি কেবল আপনার জিহ্বাকে তৃপ্ত করবে না, বরং আপনার স্বাস্থ্যকেও সুরক্ষিত রাখবে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy