মাঝরাতের ক্ষুধার রহস্য, যখন অনিদ্রা আর দুশ্চিন্তা জন্ম দেয় ‘নাইট ইটিং ডিসঅর্ডার’

দিনের তিনবেলা নিয়ম মেনে খাওয়া আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু রাতের খাবার সেরে বিছানায় যাওয়ার পরেও কি আপনার ঘন ঘন খিদে পায়? বিশেষ করে যারা অনিদ্রা বা ঘুমের সমস্যায় ভোগেন, তাদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশ লক্ষণীয়। অনেকেই এটিকে সাধারণ ব্যাপার বলে উড়িয়ে দেন, কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি এক ধরনের গুরুতর শারীরিক সমস্যা – যার নাম ‘নাইট ইটিং ডিসঅর্ডার’ (NED)।

নাইট ইটিং ডিসঅর্ডার: এক নীরব স্বাস্থ্য ঝুঁকি

প্রতি ১০০ জনের মধ্যে প্রায় একজন এই সমস্যায় ভুগে থাকেন। নাইট ইটিং ডিসঅর্ডারকে হালকাভাবে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই, কারণ এটি স্থূলতা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী অসুখের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। যাদের ওজন বেশি, তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা ওজন কমানোর প্রক্রিয়াকে আরও কঠিন করে তোলে। অতিরিক্ত ওজন, দিনের বেলায় কম ক্যালরি গ্রহণ বা পারিবারিক ইতিহাস এই ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাকে বাড়িয়ে দেয়।

লক্ষণগুলো কী কী? নিজেকে চিনে নিন

আপনার মধ্যে যদি নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখা যায়, তাহলে আপনি নাইট ইটিং ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত হতে পারেন:

সপ্তাহে অন্তত দু’দিন রাতে ঘুম ভেঙে কিছু খাওয়ার তীব্র প্রয়োজন অনুভব করা।

রাতের খাবার খাওয়া এবং ঘুমানোর মধ্যে বারবার ক্ষুধার অনুভূতি হওয়া।

দীর্ঘদিন ধরে অনিদ্রার সমস্যায় ভোগা।

সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর সকালের নাস্তা খাওয়ার প্রতি অনীহা বা ক্ষুধা কমে যাওয়া।

নিয়ন্ত্রণ করবেন কীভাবে? যখন মনকে শান্ত রাখাটাই আসল সমাধান

আধুনিক যান্ত্রিক জীবনে নানা টানাপোড়েন, ক্যারিয়ারের দুশ্চিন্তা, এবং পারিপার্শ্বিক চাপ আমাদের ঘুমের স্বাভাবিক ছন্দকে বিঘ্নিত করছে। রাতে জেগে থাকার প্রবণতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মধ্যরাতে ক্ষুধা পাওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। কোনো বিষয় নিয়ে অত্যধিক চিন্তা বা মানসিক উদ্বেগ ঘুম না আসার অন্যতম কারণ।

এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কিছু কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে:

ধ্যান ও মানসিক শান্তিবর্ধন: রাতে খাওয়ার পর ঘুমানোর আগে কিছুক্ষণ ধ্যানে বসুন। এটি মন ও মস্তিষ্ককে স্থির করতে সাহায্য করবে। এর ফলে ঘুম না আসা বা বারবার ঘুম ভেঙে যাওয়ার সমস্যা কমতে পারে। আর ভালো ঘুম হলে রাতের বেলায় অপ্রত্যাশিত ক্ষুধা পাওয়ার প্রবণতাও কমে যাবে।

দিনের বেলায় পর্যাপ্ত ক্যালরি গ্রহণ: সুষম ও পর্যাপ্ত ক্যালরিযুক্ত খাবার দিনের বেলায় গ্রহণ করুন, যাতে রাতে শরীরের ক্যালরির ঘাটতি না হয়।

মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনা: যোগা, মেডিটেশন বা পছন্দের কোনো শখের মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন।

নিয়মিত ঘুমের রুটিন: প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যান এবং একই সময়ে ঘুম থেকে উঠুন, এমনকি ছুটির দিনেও।

ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল বর্জন: ঘুমানোর আগে ক্যাফেইন বা অ্যালকোহল গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন, কারণ এগুলো ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।

যদি এই লক্ষণগুলো দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং আপনার দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে, তবে একজন চিকিৎসক বা মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সঠিক চিকিৎসা এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনে ‘নাইট ইটিং ডিসঅর্ডার’ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব এবং একটি সুস্থ ও নিরবচ্ছিন্ন ঘুমের জীবন ফিরে পাওয়া সম্ভব।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy