মধ্যরাতের ক্ষুধা কি নিছকই অভ্যাস, নাকি গোপন রোগ? ‘নাইট ইটিং ডিসঅর্ডার’-এর আদ্যোপান্ত ও মুক্তির উপায়!

দিনের কাজ সেরে রাতে ভরপেট খাবার খেয়ে যখন সবাই শান্তির ঘুমে মগ্ন, তখনও কি আপনার পেট ‘চুঁইচুঁই’ করে ওঠে? বাধ্য হয়ে মধ্যরাতে উঠে ফ্রিজ খোলার অভ্যাস কি আপনার রোজকার সঙ্গী? যদি এমনটা হয়, তবে জেনে রাখুন, এটিকে নিছকই হালকা ভাবে নেওয়া ঠিক নয়। চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, এটি এক ধরনের শারীরিক সমস্যা, যা ‘নাইট ইটিং ডিসঅর্ডার’ (এনইডি) নামে পরিচিত। আর এই সমস্যা, যা প্রতি ১০০ জনের মধ্যে একজনের মধ্যে দেখা যায়, ডেকে আনতে পারে গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি।

‘নাইট ইটিং ডিসঅর্ডার’ কী এবং এর বিপদ:

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এনইডি কেবল মধ্যরাতে ক্ষুধার অনুভূতি নয়, এটি অনিদ্রা বা ঘুম না আসার সমস্যার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। দিনের বেলা পর্যাপ্ত ক্যালোরি গ্রহণ না করা, অতিরিক্ত ওজন, বা পরিবারে কারো এই সমস্যা থাকলে এনইডি-তে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সুদূরপ্রসারী:

  • স্থূলতা ও ডায়াবেটিস: মধ্যরাতের অতিরিক্ত খাবার শরীরের ওজন বাড়িয়ে দেয়, যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • রক্তচাপ ও দীর্ঘস্থায়ী অসুখ: অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস রক্তচাপের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী অসুখের কারণ হতে পারে।
  • ওজন কমানোর জটিলতা: যারা ওজন কমাতে চাইছেন, এনইডি তাদের জন্য এক বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

আপনার কি এনইডি আছে? লক্ষণগুলো মিলিয়ে নিন:

  • প্রতিদিন না হলেও সপ্তাহে অন্তত দুদিন রাতে ঘুম ভেঙে কিছু খাওয়ার প্রবল প্রয়োজন অনুভব করা।
  • রাতের খাবার খাওয়ার পরও, ঘুমিয়ে পড়ার মধ্যে বারবার ক্ষুধার অনুভূতি আসা।
  • দীর্ঘদিন ধরে অনিদ্রা বা ঘুমে ব্যাঘাত ঘটার সমস্যা।
  • সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর সকালের নাস্তায় অনীহা বা ক্ষুধা কমে যাওয়া।

যদি এই লক্ষণগুলির একাধিক আপনার মধ্যে দেখা যায়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

মধ্যরাতের ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে আনবেন কীভাবে? কার্যকর কৌশল:

আজকের যান্ত্রিক জীবনে ক্যারিয়ারের দুশ্চিন্তা বা নানা টানাপোড়েনের মাঝে বিছানায় শুয়েই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হওয়ার ভাগ্যবানদের সংখ্যা দিন দিন কমছে। রাতে জেগে থাকার ফলেই ক্ষুধার প্রবণতা বেশি তৈরি হয়। মানসিক উদ্বেগ এবং অতিরিক্ত চিন্তা ঘুম না আসার অন্যতম কারণ। তাই, এই চক্র ভাঙতে প্রয়োজন কিছু কার্যকর অভ্যাস:

১. মন শান্ত করুন, ধ্যানে বসুন: রাতে খাওয়ার পর ঘুমানোর আগে কিছুক্ষণ ধ্যানে বসুন। মন ও মস্তিষ্ককে শান্ত করার চেষ্টা করুন। এতে ঘুম না আসা বা বারবার ঘুম ভেঙে যাওয়ার সমস্যা কমতে পারে। ভালো ঘুম হলে মধ্যরাতে আর ক্ষুধার তাড়না অনুভব করবেন না।

২. রুটিন মেনে চলুন: প্রতিদিন একই সময়ে খাওয়া এবং ঘুমানোর চেষ্টা করুন। শরীরের নিজস্ব ঘড়িকে একটি নির্দিষ্ট ছন্দে ফিরিয়ে আনলে ক্ষুধার অনুভূতিও নিয়ন্ত্রিত হবে।

৩. দিনের বেলা পর্যাপ্ত পুষ্টি: দিনের বেলা যথেষ্ট এবং পুষ্টিকর খাবার খান। এতে রাতে হঠাৎ ক্ষুধা লাগার প্রবণতা কমবে।

৪. ক্যাফেইন ও চিনি এড়িয়ে চলুন: রাতের বেলায় ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় এবং চিনিযুক্ত খাবার পরিহার করুন। এগুলো ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

৫. শারীরিক পরিশ্রম: দিনের বেলা হালকা ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম করলে রাতে ভালো ঘুম হয়, যা মধ্যরাতের ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

মধ্যরাতের এই ক্ষুধা কেবল একটি অস্বস্তিকর অভ্যাস নয়, এটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য নীরব হুমকি। নিজেকে এই সমস্যা থেকে মুক্ত করতে সচেতন হন, প্রয়োজনবোধে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং উপরোক্ত অভ্যাসগুলো মেনে চলুন। সুস্থ জীবন আপনার হাতের মুঠোয়।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy