বাঙালি গুড়কে ভীষণ ভালোবাসে। গুড়ের মিষ্টি গন্ধ আর অতুলনীয় স্বাদ গুড়প্রেমীদের মন কেড়ে নেয়, বিশেষ করে শীতের পিঠা-পায়েসে গুড়ের ব্যবহার অপরিহার্য। চিনির থেকে গুড় স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো, এই ধারণায় অনেকেই আজকাল নিয়মিত গুড় খান। গুড়ে থাকে লৌহ, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম এবং পটাশিয়াম, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং সংক্রমণ দূরে রাখতে সাহায্য করে।
খেজুরের রস থেকে তৈরি হয় মিষ্টি গুড়, আবার অনেক দেশে পামের রস থেকেও এটি তৈরি করা হয়। রস সংগ্রহ করে বড় পাত্রে সংরক্ষণ করা হয় এবং কিছুক্ষণ স্থিরভাবে রেখে তা জ্বাল দিয়ে ঘন করে গুড়ে পরিণত করা হয়।
গুড়ে ভেজাল এবং তার কারণ:
তবে দুঃখের বিষয় হলো, আজকাল বাজারে গুড়ে ভেজাল মেশানো হচ্ছে। কৃত্রিম চিনি ও রাসায়নিক রং দিয়ে গুড় তৈরি হচ্ছে, যেখানে আসল স্বাদ ও গন্ধ কিছুই থাকে না। অতিমাত্রায় বাণিজ্যিক চিন্তা এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের লোভই খেজুরের ভেজাল গুড় তৈরির অন্যতম কারণ। বাড়তি চাহিদা মেটাতে এবং গুড়ের রং উজ্জ্বল করতে খেজুর গুড়ে চিনি, ফিটকিরি ও রাসায়নিক মেশানোর অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু এই ভেজাল গুড়ের ভিড়ে আসল গুড় চেনার কিছু উপায় আছে।
আসল গুড় চেনার সহজ উপায়:
১. রং দেখে নিন: গুড় কেনার সময় অবশ্যই তার রং দেখে নিন। যদি শুদ্ধ ভালো গুড় হয়, তাহলে তার রং হবে গাঢ় বাদামি। যদি হলুদ রং দেখেন, তাহলে বুঝতে পারবেন যে এতে রাসায়নিক কিছু মেশানো রয়েছে।
২. চকচকে ভাব ও গঠন: ভেজাল গুড় বা পাটালি চকচক করে। গুড়ের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে পাটালি তৈরি করলে সেটা খুব শক্ত হয় এবং রসাল থাকে না। এই পাটালির রং কিছুটা সাদা হয়ে যায়। গুড়ে হাইড্রোজ বা ফিটকিরি ব্যবহার করলেও পাটালির রং সাদাটে হয় এবং এটি ভীষণ শক্ত হয়ে থাকে।
অন্যদিকে, আসল খেজুর গুড়ের পাটালি চকচক করে না। খাঁটি পাটালির রং হয় কালচে লাল। এটি নরম ও রসাল থাকে। অনেক সময় পাটালির ওপরের অংশ কিছুটা শক্ত হতে পারে, কিন্তু ভেতরটা অবশ্যই রসাল হবে।
৩. স্বাদ পরীক্ষা: গুড় মুখে দিয়ে দেখুন স্বাদ নোনতা কিংবা তেতো কিনা। পুরনো এবং ভেজাল গুড় সাধারণত নোনতা হয়। আর অতিরিক্ত জ্বাল দেওয়ার ফলে বা ভেজাল মেশানোর কারণে তেতো ভাব চলে আসতে পারে। গুড় কেনার সময় বিক্রেতা যদি আপনাকে একটু চেখে নিতে বলেন, তবে এই বিষয়টি খেয়াল রাখুন।
৪. টিপে দেখুন: গুড় কেনার সময় একটু টিপে দেখবেন। যত শক্ত হবে ততই ভালো। শক্ত গুড় থাকলে অন্যান্য সামগ্রী মেশানোর সম্ভাবনা অনেকটাই কম থাকে। তবে, পাটালি খুব শক্ত হলে চিনি মেশানোর সম্ভাবনা থাকে।
৫. স্ফটিকের মতো অংশ: কেনার সময় ভালো করে দেখবেন যে, গুড়ের কিছু অংশ স্ফটিকের মতো কিনা। যদি গুড়ের মধ্যে স্ফটিকের মতো কোনো অংশ থাকে, তাহলে বুঝতে পারবেন মিষ্টতা বাড়ানোর জন্য তাতে চিনি বা অন্যান্য শর্করা মেশানো হয়েছে।
এই টিপসগুলো মেনে চললে আপনি ভেজাল গুড় কেনা থেকে বিরত থাকতে পারবেন এবং শীতের সময় খাঁটি গুড়ের আসল স্বাদ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা উপভোগ করতে পারবেন।