প্রায়শই এমন ঘটনা শোনা যায় যে, ব্যাংক বা কোনো ব্যক্তি ভুল করে অন্য কারও ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দিয়েছেন। কয়েক বছর আগে নয়ডায় একটি বেসরকারি ব্যাংকের ক্ষেত্রে এমন ঘটেছিল, যেখানে ভুল করে একজন ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে ২৬ লক্ষ টাকা জমা পড়ে যায়। ওই ব্যক্তি সেই টাকা তুলতে গিয়ে তা ফেরত দিতে অস্বীকার করেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আইনত ব্যাংক কি ওই ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা ফেরত নেওয়ার অধিকার রাখে? আর যদি ওই ব্যক্তি সমস্ত টাকা খরচ করে ফেলেন, তাহলে কী হবে?
আইন অনুযায়ী টাকা ফেরতযোগ্য:
আইনের চোখে, ভুল করে যদি আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা আসে, তবে সেই টাকার মালিক আপনি নন। আইন অনুসারে, এই ধরনের অর্থ অবশ্যই ফেরতযোগ্য। যদি প্রাপ্ত ব্যক্তি টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করেন, তাহলে ব্যাংক তার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪০৬ ধারায় মামলা করতে পারে। এই ধারায় দোষী সাব্যস্ত হলে তিন বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
শুধু তাই নয়, ৪০৬ ধারার পাশাপাশি, আদালত যখন কোনো ব্যক্তিকে এই ধারার অধীনে সাজা দেয়, তখন দেওয়ানি কার্যবিধির ৩৪ এবং ৩৬ ধারার অধীনেও টাকা পুনরুদ্ধারের জন্য একটি দেওয়ানি মামলা দায়ের করা যেতে পারে। এরপর, সিভিল প্রসিডিউর আদালতে টাকা পুনরায় ফেরতের মামলা দায়ের করতে হবে। আদালত তখন অভিযুক্তের সমস্ত সম্পত্তি খতিয়ে দেখবে, প্রয়োজনে সেগুলি বাজেয়াপ্ত করবে এবং সেই সম্পত্তি বিক্রির মাধ্যমে অর্থ উদ্ধার করা হবে।
ভুল অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানান্তর করলে কী করবেন?
ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক (RBI) এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশিকা দিয়েছে। RBI-এর মতে, যদি ভুল করে আপনি অন্য কোনো ভুল অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানান্তর করেন, তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনার ব্যাংকে অভিযোগ করা উচিত। ব্যাংক দ্রুত পদক্ষেপ নিলে, সাধারণত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এর পাশাপাশি, গ্রাহককে তার পরিষেবা প্রদানকারী প্ল্যাটফর্ম, যেমন Paytm, PhonePe, GooglePay ইত্যাদি-তেও রিপোর্ট করতে হবে। যে মাধ্যমের মাধ্যমে টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে, তার গ্রাহক পরিষেবা নম্বরে অবিলম্বে যোগাযোগ করে বিষয়টি জানাতে হবে। যত দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে, ভুল করে পাঠানো টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি। এই বিষয়ে সচেতনতা এবং দ্রুত পদক্ষেপই আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।