বিয়ে একটি সামাজিক বন্ধন, যা দুজন মানুষের ভালোবাসার সম্পর্ককে পূর্ণতা দেয় এবং দাম্পত্য জীবনের সূচনা করে। তবে এই পবিত্র বন্ধনের জন্য সঠিক বয়স কত হওয়া উচিত, তা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে। আইন অনুযায়ী, বিয়ের জন্য পুরুষের ন্যূনতম বয়স ২১ বছর এবং নারীর ১৮ বছর পূর্ণ হতে হবে। এর কম বয়সে বিবাহ বাল্যবিবাহ হিসেবে গণ্য হবে এবং তা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু আইন নয়, কম বয়সে বিয়ে করলে তা দীর্ঘস্থায়ী করাও কঠিন হয়ে পড়ে। অপরিণত বয়সে সংসারের দায়িত্ব নিতে গিয়ে অনেকেই দাম্পত্য জীবনে সুখী হতে পারেন না। তবে দেরিতে বিয়ে করলেই মানুষ বেশি সুখী হন, এমন ধারণাও অমূলক।
বিয়ে নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা ও সমীক্ষার ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ২৫ থেকে ৩২ বছরের মধ্যেই নারী-পুরুষ উভয়ের বিয়ে সম্পন্ন করা উচিত। আলবার্টা ইউনিভার্সিটির বিশেষজ্ঞদের মতে, যারা দেরিতে বিয়ে করেন, তাদের তুলনায় যারা কম বয়সে বিয়ে করেন, তাদের মধ্যে হতাশাগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই একটি নির্দিষ্ট বয়সে বিয়ে করা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
সমাজবিজ্ঞানী ও মনোবিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিনের গবেষণা ও তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে জানিয়েছেন, ২০ বছর বা তার আগে যারা বিয়ে করেন, তাদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের হার তুলনামূলকভাবে বেশি। এর প্রধান কারণ হতে পারে আর্থিক অসচ্ছলতা, পারিবারিক চাপ, একে অপরের প্রতি বোঝাপড়ার অভাব এবং ক্যারিয়ারের অস্থিতিশীলতা।
অন্যদিকে, গবেষণা বলছে, ৩২ বছর বয়সের পরে যারা বিয়ে করেন, তারা আর্থিকভাবে স্থিতিশীল হওয়ার পাশাপাশি সাংসারিক জীবনেও বেশি সুখী হন। এই ধরনের দাম্পত্যে ব্যক্তিত্বের সংঘাত ও হতাশার মতো সমস্যাগুলো কম দেখা যায়। এমনকি ২৫ থেকে ৩২ বছর বয়সের মধ্যে যারা বিয়ে করেন, তাদের মধ্যেও বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা তুলনামূলকভাবে কম ঘটে।
মনোবিজ্ঞানী মরগান পেকও দেরিতে বিয়ের পক্ষ সমর্থন করেছেন। তিনি বলেন, ‘একজন ব্যক্তি যখন পরিপক্ক বয়সে বিয়ে করেন, তখন তিনি সঠিকভাবে পরিবারের দায়িত্ব নিতে সক্ষম হন। এমনকি সঙ্গীকে সময় দেওয়া থেকে শুরু করে দাম্পত্য বোঝাপড়াও তাদের মধ্যে ভালো থাকে।’
বিয়ের বেশ কিছু ইতিবাচক দিকও রয়েছে। ভারতের মাইন্ডট্রাইব.ইন-এর প্রতিষ্ঠাতা ও ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ডক্টর প্রেরণা কোহলি জানান, বিয়ে নারীদের মানসিকভাবে স্থিতিশীল করে এবং পুরুষদের মধ্যে দায়িত্ববোধ ও বিবেকের উন্নতি ঘটায়। ইউনিভার্সিটি অব উইন্ডসে প্রকাশিত এক গবেষণা অনুযায়ী, বিয়ে নারী-পুরুষ উভয়ের মধ্যেই হতাশা ও নেশাগ্রস্ততার মতো মানসিক অসুস্থতার ঝুঁকিও হ্রাস করে।
পরিশেষে বলা যায়, বিয়ের জন্য সঠিক বয়স নির্ধারণের ক্ষেত্রে আর্থিক স্থিতিশীলতা, মানসিক পরিপক্কতা এবং একে অপরের প্রতি বোঝাপড়ার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২৫ থেকে ৩২ বছর বয়সকে বিশেষজ্ঞরা বিয়ের জন্য উপযুক্ত সময় হিসেবে মনে করলেও, ব্যক্তির নিজস্ব পরিস্থিতি ও উপলব্ধির উপরও অনেক কিছু নির্ভর করে।