বিয়ে বা বাগদানের সময় আংটি পরানোর প্রথা বহু প্রাচীন। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না যে, কেন এই আংটি শুধুমাত্র অনামিকা আঙুলেই পরা হয়। এর পেছনে রয়েছে অনেক ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা।
প্রাচীন রোমান সমাজে বিশ্বাস ছিল যে, অনামিকা আঙুল থেকে সরাসরি হৃদপিণ্ডে একটি শিরা গেছে, যার নাম ‘ভেনা এমোরিয়াস’ (Vena Amoreus), অর্থাৎ ‘প্রেমের শিরা’। এই বিশ্বাস থেকেই অনামিকায় আংটি পরানোর প্রথা চালু হয়, যা হৃদয়ের সঙ্গে সম্পর্কের এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধন হিসেবে বিবেচিত।
ষোলো শতকের ডাচ চিকিৎসক লেভিনাস লেমনিয়াস তাঁর এক বইতে লিখেছিলেন যে, অনামিকায় সোনার আংটি ঘষলে তা হৃদয়ে এক ধরনের মৃদু আলোড়ন তৈরি করে।
অন্যদিকে, প্রাচীন চীনা আকুপাংচার বিশারদদের মতে, প্রতিটি আঙুলের একটি বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। বুড়ো আঙুল বাবা-মাকে, তর্জনী আত্মীয়-স্বজনকে, মধ্যমা নিজেকে এবং কনিষ্ঠা আঙুল সন্তান-সন্ততিকে বোঝায়। এই সব আঙুলের সঙ্গে জীবনের সব সম্পর্কের যোগ থাকলেও, অনামিকা আঙুলটি জীবনসঙ্গী বা জীবনসঙ্গিনীর জন্য নির্দিষ্ট।
আংটির গোলাকার আকৃতিকেও শাশ্বত বা চিরন্তন ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। পৃথিবীর অনেক সংস্কৃতিতেই গোলাকার জিনিসকে অসীমতার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। তাই আংটি গোলাকার হওয়ার মাধ্যমে ভালোবাসার চিরন্তন রূপ প্রকাশ করা হয়।
ভারতীয় জ্যোতিষশাস্ত্র এবং সামুদ্রিক শাস্ত্রও অনামিকাকে ‘প্রেমের আঙুল’ হিসেবে দেখে। সেই প্রাচীনকাল থেকেই ভারতবর্ষে বিবাহের সময় বা বাগদানের আংটি অনামিকায় পরানো হয়, যা আজও এই ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক হিসেবে প্রচলিত।