বয়স বাড়লেও হাড় থাকবে মজবুত, অস্টিওপোরোসিস ঠেকানোর সহজ উপায় ও প্রয়োজনীয় খাদ্যতালিকা

একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর হাড় ক্ষয় হতে শুরু করে, যা থেকে অস্টিওপোরোসিস-এর মতো গুরুতর রোগ হতে পারে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড় ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে। দুঃখজনকভাবে, আমরা বেশিরভাগই হাড়ের সুস্থতা নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাই না, যার ফলে হাড় প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান থেকে বঞ্চিত হয়। হাড়ের সুস্থতার জন্য পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি অত্যন্ত জরুরি। ভিটামিন ডি শরীরকে ক্যালসিয়াম শুষে নিতে সহায়তা করে। এ কারণে হাড় সুরক্ষিত রাখতে খাদ্যতালিকার দিকে অবশ্যই নজর দেওয়া জরুরি।

এখানে কিছু খাবার উল্লেখ করা হলো যা আপনার হাড়ের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে:

১. দুধ ও টক দই
দুধ: শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণে দুধের বিকল্প নেই। যারা ডেইরি মিল্ক পছন্দ করেন না, তারা সয়ামিল্ক, আমন্ড দুধ বা নারকেলের দুধ বেছে নিতে পারেন। এসব দুধেও পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। তবে, কেনার আগে প্যাকেটের গায়ে উপাদানগুলোর মাত্রা দেখে নিন।

টক দই: যারা দুধ খেতে পছন্দ করেন না, তারা খাদ্যতালিকায় টক দই রাখতে পারেন। এতে প্রচুর ভিটামিন ডি রয়েছে। প্রতিদিনের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণে এক কাপ টক দই খেতে পারেন। এক কাপ টক দইয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ ক্যালসিয়াম ও ২০ শতাংশ ভিটামিন ডি থাকে, সাথে পর্যাপ্ত প্রোটিনও পাওয়া যায়।

২. ডিম
ব্রেকফাস্টে প্রায় রোজই ডিম থাকে। ডিমে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন ডি, যা হাড়ের সুস্থতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে ডিমের ভিটামিন ডি কেবল কুসুমেই থাকে। তাই কুসুম বাদ না দিয়ে সাদা অংশের সঙ্গে ওমলেট করে খেলে উপকার পাওয়া যাবে।

৩. সবুজ সবজি
হাড় মজবুত রাখার জন্য ক্যালসিয়ামের বিকল্প নেই। দুধ ছাড়াও গাঢ় সবুজ বিভিন্ন সবজি থেকে তা পাওয়া সম্ভব। সবুজ পাতাযুক্ত শাক-সবজির মধ্যে বাঁধাকপি, পালংশাক, মূলাশাক, ব্রোকলি ও সয়াবিন দারুণ উদাহরণ। এক কাপ পাতাযুক্ত সবজিতে প্রায় ২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। এছাড়া, গাঢ় সবুজ সবজিতে ভিটামিন কে পাওয়া যায়, যা অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি হ্রাস করে।

৪. ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার
হাড়ের ঘনত্ব রক্ষায় ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কডলিভার অয়েলে রয়েছে উচ্চমানের ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন ডি ও ভিটামিন এ। প্রতিদিন মাত্র এক টেবিল চামচ কডলিভার অয়েল আপনার শরীরে এই তিনটি উপাদানের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারে। তবে, এক টেবিল চামচের বেশি কডলিভার অয়েল খাওয়া উচিত নয়, কারণ ভিটামিন এ-র আধিক্য স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়।

৫. মিষ্টি আলু
হাড়ের সুস্বাস্থ্যের জন্য ম্যাগনেশিয়াম ও পটাশিয়ামের প্রয়োজন রয়েছে। শরীরে ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতি থাকলে ভিটামিন ডি-এর ভারসাম্য রক্ষায় সমস্যা হয়, যা হাড়ের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। অন্যদিকে, পটাশিয়াম শরীরের ক্ষারীয় পদার্থগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়, যাতে হাড় থেকে ক্যালসিয়াম বেরিয়ে যেতে না পারে। এই দুটি উপাদান সহজে পেতে চাইলে প্রতিদিন একটি করে মাঝারি সাইজের মিষ্টি আলু লবণ ছাড়া বেক করে খেতে পারেন। এতে প্রায় ৩২ মিলিগ্রাম ম্যাগনেশিয়াম ও ৫৪২ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম থাকে।

৬. সাইট্রাস ফল
যারা আঙ্গুর খেতে ভালোবাসেন, তারা ব্রেকফাস্টে এটি যোগ করতে পারেন। সাইট্রাস ফলে রয়েছে ভিটামিন সি, যা হাড়ের ক্ষয়রোধ করে। একটি মাত্র লাল আঙ্গুরে প্রায় ৯১ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে, যা আপনার সারাদিনের ভিটামিন সি-এর চাহিদা পূরণ করতে পারে! সাইট্রাস ফলের তালিকায় কমলালেবু, লেবু ও জাম্বুরাও রাখা যেতে পারে।

৭. আমন্ড
ব্রেকফাস্টে আমন্ড বাটার খেতে পারেন। দুই টেবিল চামচ আমন্ড বাটারে প্রায় ১১২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও ২৪০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম পাওয়া যায়। এছাড়াও, হাড় পরিপুষ্ট করতে প্রোটিনসহ আরও অনেক পুষ্টি উপাদান আমন্ড বাদাম থেকে পাওয়া সম্ভব।

৮. ক্যালসিয়ামযুক্ত পানীয়
হাড় শক্তিশালী করতে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ জুস বা পানীয় পান করতে পারেন। ব্রেকফাস্টে শুধু কমলার জুসই পর্যাপ্ত ক্যালসিয়ামের জোগান দিতে পারে না। এর জন্য তিনটি কমলার রসে পাঁচ-ছয়টি আঙ্গুর দিয়ে জুস করে খাওয়া যেতে পারে। এছাড়া একটি আপেল, দুটি ব্রোকলির ডাঁটা ও কিছু পরিমাণ বাঁধাকপির পাতা দিয়ে স্বাস্থ্যকর জুস তৈরি করে নিতে পারেন।

৯. শুকনা বড়ই
স্ন্যাকস হিসেবে ড্রাই ফ্রুটের বদলে শুকনা বড়ই খেতে পারেন। এটি সুস্বাদু তো বটেই, গবেষণায় দেখা গেছে, রোজ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ শুকনা বড়ই খেলে হাড় মজবুত হয় ও ক্ষয়রোধ হয়।

১০. ঝোলা গুড়
খাবারে পরিশোধিত সাদা চিনির পরিবর্তে ঝোলা গুড় খেতে পারেন। এক টেবিল চামচ ঝোলা গুড়ে প্রায় ৪১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। এটি টক দই, ওটমিল ও স্মুদিতে মধুর পরিবর্তে ব্যবহার করা যেতে পারে।

হাড়ের সুস্থতার জন্য এই খাদ্য উপাদানগুলো নিয়মিত গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। একটি সুষম খাদ্যতালিকা এবং সঠিক জীবনযাপনই মজবুত হাড়ের ভিত্তি তৈরি করতে পারে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy