স্কুলে বাচ্চাদের টিফিন দেওয়ার সময় মায়েদের প্রায়শই সমস্যায় পড়তে হয়। একদিকে বাচ্চাদের “এটা খাবো না, ওটা খাবো না” বায়না, অন্যদিকে আকর্ষণীয় টিফিন বাক্স ছাড়া তারা টিফিন নিতেই চায় না।
তবে, মায়েদের কাছে আকর্ষণীয় টিফিন বাক্সের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো খাবার দীর্ঘক্ষণ গরম এবং জীবাণুমুক্ত রাখা। তাই তারা প্রায়শই প্লাস্টিকের সুন্দর টিফিন বাক্সে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল দিয়ে খাবার ভালোভাবে মুড়ে দেন। এর ফলে খাবার বেশ কিছুক্ষণ গরম থাকে ঠিকই, কিন্তু প্লাস্টিকের ক্ষতিকর রাসায়নিকের হাত থেকে শিশুদের রক্ষা করা সম্ভব হয় না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্লাস্টিকের টিফিন বাক্স বা অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলে মুড়ে শিশুদের টিফিন দেওয়া মোটেও উচিত নয়। দীর্ঘদিন ধরে এই পদ্ধতিতে খাবার খাওয়ানোর ফলে শিশুদের শরীরে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। কারণ, এভাবে খাবার দেওয়ার ফলে সামান্য পরিমাণে হলেও ক্ষতিকর রাসায়নিক খাবারের সাথে মিশে ধীরে ধীরে শিশুদের শরীরে জমা হতে থাকে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FDA)-এর একটি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, প্লাস্টিকের টিফিন বক্সে বা প্লাস্টিকের তৈরি কোনো পাত্রে গরম খাবার রাখলে, গরম খাবারের সংস্পর্শে এসে প্লাস্টিকের পাত্র থেকে ক্ষতিকর রাসায়নিক ‘জেনোস্ট্রেজেন’ নির্গত হয়।
শুধু তাই নয়, পলিথিন ফয়েলে গরম খাবার মুড়ে রাখলেও একইভাবে খাবারে ক্ষতিকর ‘জেনোস্ট্রেজেন’ মেশে। মার্কিন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ‘জেনোস্ট্রেজেন’-এর প্রভাবে শিশুদের শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বিগড়ে যেতে পারে। অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলে মুড়ে রাখা খাবারও শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
ভারতীয় পুষ্টিবিদ রুজুতা দ্বিওয়েকারের মতে, খাবার দীর্ঘক্ষণ গরম রাখার জন্য সাধারণত অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলে মুড়ে রাখা হয়। কিন্তু অনেকেই জানেন না যে, গরম খাবার অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলের সংস্পর্শে আসার ফলে খাবারে অ্যালুমিনিয়াম মিশতে শুরু করে।
রুজুতা দ্বিওয়েকার আরও বলেন, এই অ্যালুমিনিয়াম মেশানো খাবার খেলে শরীরে ইনসুলিনের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। এর ফলে স্থূলতা, ফ্যাটি লিভার এবং ডায়াবেটিসের মতো রোগের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
অতএব, এই পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো, শিশুদের স্টিলের টিফিন বক্সে খাবার দিন। সম্ভব হলে খাবার কাপড়ে মুড়ে দিন। এই পদ্ধতিতে খাবার দীর্ঘক্ষণ গরম থাকবে এবং একই সাথে আপনার সন্তানের স্বাস্থ্যও সুরক্ষিত থাকবে।