কেরিয়ারে থিতু হতে গিয়ে অনেক পুরুষেরই সংসার শুরু করতে কিছুটা দেরি হয়ে যায়। আর তার জের ধরে পরিবার বাড়ানোর পরিকল্পনাও পিছিয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে নারীরা যতটা চিন্তিত হন, পুরুষরা যেন ততটাই উদাসীন থাকেন।
তবে নতুন এক গবেষণা পুরুষদের এই বিষয়ে সতর্ক করেছে। গবেষকরা বলছেন, নারীর মতো পুরুষেরও রয়েছে জৈবিক ঘড়ি বা ‘বায়োলজিক্যাল ক্লক’, যা নীরবে চলতে থাকে। তাই পুরুষ যদি সঠিক সময়ে সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা না করেন, তবে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে তার স্ত্রী ও অনাগত সন্তানের উপর।
একটি দম্পতির সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা, গর্ভাবস্থার জটিলতা এবং সন্তানের স্বাস্থ্য – এই বিষয়গুলোর উপর ওই দম্পতির বয়স কী ধরনের প্রভাব ফেলে, তা নিয়ে দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে গবেষণা চালিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের মতে, যারা ইতিমধ্যেই সংসার শুরু করতে দেরি করে ফেলেছেন, তাদের উচিত ৩৫ বছর বয়স পার হওয়ার আগেই সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাটগার্স ইউনিভার্সিটির রবার্ট উড জনসন মেডিকেল স্কুলের উইমেন’স হেল্থ ইনস্টিটিউটের পরিচালক গ্লোরিয়া বাকমান বলেন, “বয়স ৩৫ পেরোলে নারীর শরীরে যেসব পরিবর্তন আসে, তার কারণে গর্ভধারণ ও গর্ভের সন্তানের স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে পড়ে – এই বিষয়টি সম্পর্কে প্রায় সবাই অবগত। তবে পুরুষের বয়সও যে একই ধরনের ঝুঁকি বয়ে আনতে পারে, সে বিষয়ে অধিকাংশ পুরুষেরই কোনো ধারণা নেই।”
‘ম্যাচুরিটাস’ নামক জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় জানা যায়, বয়স ৪৫ পেরোলে পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা কমতে শুরু করে। পাশাপাশি, এই পুরুষের কারণে তার সঙ্গীর গর্ভবস্থাজনিত বিভিন্ন জটিলতা, যেমন ‘জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস’, ‘প্রি-এক্লামসিয়া’ ও ‘প্রি-টার্ম বার্থ’-এর ঝুঁকি বাড়ে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, বাবার বয়স বেশি হলে তার নবজাতক সন্তানের সঠিক সময়ের আগেই ভূমিষ্ঠ হওয়া, প্রসবের সময় মারা যাওয়া, অস্বাস্থ্যকর ওজন নিয়ে জন্ম নেওয়া এবং জন্মগত বিকলাঙ্গতার ঝুঁকি বেশি থাকে। বেঁচে থাকলে এই শিশুদের মধ্যে অল্প বয়সে ক্যান্সার, মানসিক অসুস্থতা ও প্রতিবন্ধী হয়ে বেড়ে ওঠার প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
বাকমান মনে করেন, এই দুর্ঘটনাগুলোর প্রধান কারণ হলো জৈবিকভাবে ‘টেস্টোস্টেরন’-এর সরবরাহের অভাব, যা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে। সেই সঙ্গে শুক্রাণু ও বীর্যের গুণগত মানও হ্রাস পায়।
তিনি বলেন, “বয়সের সঙ্গে মানুষের পেশি যেমন দুর্বল হয় এবং স্থিতিস্থাপকতা কমে যায়, ঠিক তেমনি পুরুষের শুক্রাণুও সময়ের সঙ্গে তার কার্যকারিতা হারাতে থাকে।”
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, স্ত্রীর বয়স ২৫ বছরের কম হলেও মধ্যবয়সী পুরুষ প্রজনন ক্ষমতা নিয়ে সমস্যায় পড়তে পারেন।
বাকমানের পরামর্শ, “নারীরা বরাবরই তাদের প্রজনন ক্ষমতা নিয়ে পুরুষের তুলনায় বেশি ওয়াকিবহাল। পুরুষরা সাধারণত বিপদে না পড়া পর্যন্ত যৌন অথবা প্রজনন ক্ষমতা সম্পর্কে জানতে চিকিৎসকের কাছে যান না। তবে এই বিষয়গুলো সম্পর্কে নারী-পুরুষ উভয়েরই জ্ঞান রাখা জরুরি। আর চিকিৎসকদেরও উচিত ৩৫ পেরিয়ে যাচ্ছে অথচ এখনও সন্তান নেননি – এমন পুরুষদের এ বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া।”