পুঁইশাক, শুধু সুস্বাদু নয়, স্বাস্থ্যের মহৌষধ! কেন সারাবছর এই সহজলভ্য শাকটি আপনার খাদ্যতালিকায় রাখা জরুরি?

পুঁইশাক – আমাদের দেশের অত্যন্ত জনপ্রিয়, সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর একটি শাক। সবজি বাজারে প্রায় সারাবছরই এর দেখা মেলে, এবং ইলিশ-পুঁই বা চিংড়ি-পুঁইয়ের মতো পদ অনেকের কাছেই অতি প্রিয়। সবুজ ও লাল – এই দুই রঙের পুঁইশাক তার সহজলভ্যতা এবং অতুলনীয় পুষ্টিগুণের কারণে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। প্রবাদে আছে, ‘শাকের মধ্যে পুঁই, মাছের মধ্যে রুই’, আর এই প্রবাদটি যে কতখানি সত্যি, তা পুঁইশাকের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানলে বোঝা যায়।

পুঁইশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’, এবং পাশাপাশি প্রচুর ক্যালসিয়াম ও আয়রন। নানা ধরনের ভিটামিন সমৃদ্ধ এই শাকটি একদিকে যেমন বহুবিধ রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে, অন্যদিকে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

পুঁইশাকের ১০টি অলৌকিক উপকারিতা:

১. কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে সেরা: পুঁইশাকে প্রচুর পরিমাণে আঁশ (ফাইবার) থাকে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এবং দেহের বর্জ্য সুষ্ঠুভাবে বাইরে যেতে সাহায্য করে, হজম প্রক্রিয়াকে সচল রাখে।

২. চোখ, চুল ও ত্বকের সুরক্ষা: পুঁইশাকে বিদ্যমান ভিটামিন এ এবং সি, যা ত্বকের রোগজীবাণু দূর করে, শারীরিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে এবং সেইসঙ্গে চুলকেও মজবুত রাখে।

৩. পাইলস প্রতিরোধ: নিয়মিত পুঁইশাক খেলে পাইলস, ফিস্টুলা ও হেমোরয়েড হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। এর উচ্চ ফাইবার উপাদান অন্ত্রের গতিবিধি স্বাভাবিক রাখে।

৪. ক্যান্সার প্রতিরোধ: পুঁইশাকে প্রচুর পরিমাণ আঁশ বা ফাইবার থাকে যা পাকস্থলী এবং কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

৫. ব্রণের সমস্যায় সমাধান: যারা ব্রণের সমস্যায় ভোগেন, তাদের জন্য পুঁইশাক খুবই ভালো। এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণাগুণ ব্রণের প্রকোপ কমাতে সাহায্য করে।

৬. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: পুষ্টিগুণ বেশি থাকায় এই শাক শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা রাখে, যা আপনাকে বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি যোগায়।

৭. বদহজম ও গ্যাসের উপশম: পুঁইশাক দেহ থেকে সঠিকভাবে বর্জ্য নিষ্কাশন করে বদহজম, গ্যাস, অ্যাসিডিটিসহ নানা পেটের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।

৮. অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ: পুঁইশাকের আছে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ। শরীরের কোনো অংশ আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ফুলে গেলে পুঁইশাকের শিকড় বেটে লাগালে দ্রুত উপশম হয়।

৯. সংক্রমণ প্রতিরোধ: শরীরে খোসপাঁচড়া কিংবা ফোড়ার মতো অবাঞ্ছিত সংক্রমণের বিরুদ্ধেও লড়তে পারদর্শী পুঁইশাক। এর প্রাকৃতিক উপাদানগুলি জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে।

১০. মাথাব্যথা দূরীকরণ: হজম ক্ষমতা বাড়িয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে পুঁইশাকের জুড়ি নেই। এছাড়াও, যাদের প্রায় প্রতিদিনই মাথাব্যথা থাকে, নিয়মিত পুঁইশাক খেলে তারা দ্রুত উপকার পাবেন।

তাই আপনার পরিবারের সবার স্বাস্থ্য সচেতনতায় প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পুঁইশাক রাখুন। এই সহজলভ্য শাকটি আপনার শরীরকে ভেতর থেকে শক্তিশালী করে তুলবে এবং সুস্থ জীবনযাপনে সহায়তা করবে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy