পিরিয়ডের সময়টা যেকোনো নারীর জন্যই বেশ অস্বস্তিদায়ক হতে পারে। এই সময়টিতে স্বস্তি দিতে ব্যবহারকারীদের কাছে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মেনস্ট্রুয়াল কাপ। যারা একবার এটি ব্যবহার করেছেন, তারা স্যানিটারি ন্যাপকিনের বদলে আর কিছু ভাবতেই রাজি নন। চিকিৎসকরাও আজকাল মেনস্ট্রুয়াল কাপ ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন। তবুও নানা ভয় বা ভুল ধারণা থেকে অনেক নারী এটি ব্যবহার করতে দ্বিধা করেন। চলুন, মেনস্ট্রুয়াল কাপ সম্পর্কে কিছু প্রচলিত ভুল ধারণা এবং সঠিক তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
মেনস্ট্রুয়াল কাপ কী?
মেনস্ট্রুয়াল কাপ হলো মেডিক্যাল গ্রেড সিলিকনের তৈরি একটি ছোট কাপ, যা পিরিয়ডের সময় রক্ত ধরে রাখে। এটি স্যানিটারি ন্যাপকিনের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। চিকিৎসকদের মতে, স্যানিটারি ন্যাপকিনের চেয়ে এটি অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর এবং পিরিয়ডের সময় যেকোনো সংক্রমণ ঠেকাতে কার্যকরী। এই কাপ ব্যবহার করলে লিকেজের আশঙ্কা থাকে না এবং এটি পিরিয়ডের দিনগুলোকে অনেকটাই চিন্তামুক্ত করে তোলে। মেনস্ট্রুয়াল কাপ ব্যবহারে কোনো ধরনের ইনফেকশনের সম্ভাবনাও নেই।
মেনস্ট্রুয়াল কাপ সম্পর্কে প্রচলিত ভুল ধারণাগুলো
মেনস্ট্রুয়াল কাপ নিয়ে সমাজে কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত আছে, যা নারীদের এটিকে ব্যবহার থেকে বিরত রাখে। আসুন, সেই ভুল ধারণাগুলো ভেঙে ফেলি:
মেনস্ট্রুয়াল কাপ পরা যন্ত্রণাদায়ক: এটি একটি অত্যন্ত প্রচলিত ভুল ধারণা। মেনস্ট্রুয়াল কাপ মোটেই যন্ত্রণাদায়ক বা অস্বস্তিকর নয়। একবার সঠিক ভাবে পরার পর আপনি টেরও পাবেন না যে ভেতরে কিছু রয়েছে। আপনি অন্যান্য সাধারণ দিনের মতোই দৈনন্দিন কাজ করতে পারবেন, কোনো ধরনের যন্ত্রণা হবে না।
মেনস্ট্রুয়াল কাপ পরলে ভার্জিনিটি নষ্ট হয়! যোনির একটি অংশ হলো হাইমেন, যার সঙ্গে যৌন জীবন বা সতীত্বের কোনো সম্পর্ক নেই। হাইমেন কোনো পর্দা নয়, এটি একটি রাবার ব্যান্ডের মতো অংশ। যৌন সম্পর্ক ছাড়াও সাঁতার, সাইকেল চালানো, ব্যায়ামের মতো অন্য কোনো কাজের জন্যও হাইমেন প্রসারিত হতে পারে। তাই মেনস্ট্রুয়াল কাপের সঙ্গে হাইমেন বা ভার্জিনিটির কোনো সম্পর্ক নেই।
মেনস্ট্রুয়াল কাপের মাপ সবার জন্যই এক: এই ধারণাটিও ভুল। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে নারীর শরীরে পরিবর্তন আসে। বিয়ের পর কিংবা প্রাকৃতিকভাবে সন্তান হওয়ার পর যোনি পথ প্রসারিত হতে পারে। তাই সব বয়সের নারীর জন্য একই মাপের কাপ সঠিক নয়। আপনার বয়স এবং শারীরিক অবস্থার সঙ্গে মিলিয়ে সঠিক মাপের মেনস্ট্রুয়াল কাপ ব্যবহার করা উচিত। ছোট, মাঝারি এবং বড় – বিভিন্ন মাপের মেনস্ট্রুয়াল কাপ বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। কেনার আগে আপনার জন্য কোনটি সঠিক, তা দেখে কিনুন।
মেনস্ট্রুয়াল কাপের ধারণক্ষমতা কম: এটিও একটি ভুল ধারণা। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, পিরিয়ডে সর্বমোট ৩০ থেকে ৪০ মিলি রক্তক্ষরণ হয়, যা দুই থেকে তিন টেবিলচামচের সমান। এটি সর্বোচ্চ ৬০ মিলি বা ৪ টেবিল চামচ পর্যন্ত হতে পারে। অর্থাৎ, পিরিয়ডের সময়ে প্রতিদিন ঠিক কতটুকু রক্তক্ষরণ হয়, তা সহজেই অনুমান করা যায়। মেনস্ট্রুয়াল কাপের ধারণক্ষমতা যথেষ্ট বেশি। প্রতি চার ঘণ্টা পরপর কাপটি পরিষ্কার করে নিলেই যথেষ্ট। তবে একটানা আট ঘণ্টার বেশি কাপ ভেতরে রাখবেন না।
মেনস্ট্রুয়াল কাপ কীভাবে ব্যবহার করবেন?
মেনস্ট্রুয়াল কাপ ব্যবহার করার জন্য বিভিন্ন ফোল্ড করা যায়। সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো ‘সি’ (C) অক্ষরের মতো করে কাপটি মুড়িয়ে নেওয়া। এরপর ধীরে ধীরে এটিকে যোনিপথের ভিতরে প্রবেশ করান। কাপটি নিজে থেকেই খুলে নিজের জায়গা করে নেবে। এরপর চারপাশে আঙুল দিয়ে দেখে নিন কোনো জায়গায় ফাঁকা রয়ে গেছে কি না, যাতে রক্তপাত না হয়। প্রথম দিকে এটি মানিয়ে নিতে একটু সমস্যা হতে পারে, তবে কয়েকবার ব্যবহারের পরই আপনি স্বস্তিবোধ করবেন এবং এর সুবিধাগুলো উপভোগ করতে পারবেন।
মেনস্ট্রুয়াল কাপ শুধু পরিবেশবান্ধবই নয়, আপনার পিরিয়ডের দিনগুলোকেও করে তুলবে আরও আরামদায়ক ও স্বাস্থ্যকর। আপনি কি মেনস্ট্রুয়াল কাপ ব্যবহারে আগ্রহী?