সাদা সরু চালের গরম ধোঁয়া ওঠা ভাতের সঙ্গে সুস্বাদু পদ, ভুর ভুর করে ঘিয়ের গন্ধ অথবা মাখনের অমৃত আস্বাদ – এ সবই বাঙালির ভোজনবিলাসের অংশ। কিন্তু স্বাদের পাশাপাশি স্বাস্থ্যের কথাও মাথায় রাখা জরুরি। আধুনিক খাদ্যাভ্যাসে যেখানে স্টার্টার হিসেবে ক্রিসপি বেবি কর্ন বা প্রন ফ্রাইয়ের মতো মশলাদার পদ শুরুতেই জায়গা করে নিয়েছে, সেখানে চিকিৎসকরা বলছেন, শরীরের সুস্থতা নিশ্চিত করতে পাতে ফিরিয়ে আনতে হবে তেতো।
পুষ্টিবিদ ও আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞদের মতে, খাওয়ার শুরুতে তেতো খাওয়ার রেওয়াজ বহু প্রাচীন, যা শরীরকে সুস্থ ও নীরোগ রাখতে সাহায্য করত। এই প্রথা বদলে যাওয়ায় শরীর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, কমছে স্বাভাবিক খিদেও। চিকিৎসকদের স্পষ্ট পরামর্শ: সুস্থ থাকতে হলে এখন থেকেই স্টার্টারে তেতোকে ‘মাস্ট’ করতে হবে। সে নিম-বেগুন ভাজা হোক বা উচ্ছের তরকারি। উচ্ছে সেদ্ধ হলে তো আরও ভালো। সকালে খালি পেটে এক গ্লাস চিরতার জল পান করলে তা সোনায় সোহাগা।
খাওয়ার শুরুতেই কেন তেতো?
চিকিৎসকরা এর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ তুলে ধরেছেন:
পরিপাকে সহায়তা: তেতো পাকস্থলীতে গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিড নিঃসরণ বাড়াতে সাহায্য করে। এর ফলে, তেতো খাওয়ার পর খাওয়া অন্য খাবার সহজে পরিপাক হয়।
রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ: তেতো খাবারের মধ্যে এমন কিছু রাসায়নিক উপাদান থাকে, যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকর।
রোগ প্রতিরোধ: চিকিৎসকদের দাবি, নিয়মিত নিম বা উচ্ছে খেলে শরীরকে বহু রোগ থেকে দূরে রাখা সম্ভব।
নিমপাতা ও উচ্ছের অবিশ্বাস্য গুণাবলি:
নিমপাতা: ডায়াবেটিসের জন্য নিমপাতা একরকম ‘যম’। জন্ডিসে এর গুণ অতুলনীয়। এটি কৃমিনাশক ও উকুননাশক হিসেবেও কাজ করে। ত্বকের সুরক্ষায় নিমপাতার রয়েছে অসাধারণ গুণাবলি। নিয়মিত নিমপাতা সেবনে আলসার ও ম্যালেরিয়া অনেকটাই প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে চিকিৎসকরা মনে করেন। এছাড়াও, এটি চোখ ভালো রাখতে সাহায্য করে।
উচ্ছে বা করলা: কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, খাদ্যআঁশ, নিয়াসিন, ভিটামিন এ, সি, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো উপাদানে ভরপুর উচ্ছে বা করলা। এটি ডায়াবেটিস, গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য ও জন্ডিসে মহৌষধ হিসেবে কাজ করে। ভালো কোলেস্টেরল বাড়াতে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা কমাতে করলা অত্যন্ত কার্যকরী।
চিকিৎসকদের পরামর্শ, ক্রিসপি বেবি কর্ন বা প্রন ফ্রাইয়ের মতো অন্যান্য স্টার্টার বাদ দিয়ে খাবার পাতে শুরুতেই শুক্তো, নিম-বেগুন, করলা সেদ্ধ বা উচ্ছের তরকারির মতো কোনো তেতো পদ যোগ করুন। এই অভ্যাস শুধুমাত্র আপনার হজম প্রক্রিয়াকেই উন্নত করবে না, বরং সামগ্রিক স্বাস্থ্য রক্ষায় একটি বড় ভূমিকা পালন করবে।