ছাত্রজীবন মানেই আনন্দ, আড্ডা আর অফুরন্ত স্বাধীনতা। তবে এই সবকিছুর মাঝে কাঁটার মতো বিঁধে থাকে একটাই শব্দ – ‘পরীক্ষা’! পরীক্ষার নাম শুনলেই বুক দুরুদুরু করে ওঠে না, এমন ছাত্রছাত্রী খুঁজে পাওয়া সত্যিই দুষ্কর। এই ভয়কে সঙ্গী করে কত মেধাবী শিক্ষার্থী পড়াশোনা থেকে ঝরে পড়েছে তার ইয়ত্তা নেই। কলেজে যাওয়া, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া, ঘুরে বেড়ানো – সবই ভালো লাগে, কিন্তু পরীক্ষার সামনে এলেই যেন সব আনন্দ উধাও।
এই চিরচেনা পরীক্ষার ভয় দূর করতে এবং সেরা ফল অর্জন করতে বিশেষজ্ঞ শিক্ষকরা দিচ্ছেন ৯টি দারুণ পরামর্শ। এই নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করে নিয়মিত পড়াশোনা করলে শুধু ভালো ফলাফলই নয়, সমস্ত দুশ্চিন্তা আপনার মাথা থেকে পালাবে নিশ্চিত।
১. পড়াকে রঙিন কোডে সাজান:
এটি পড়াশোনার অন্যতম কার্যকর পদ্ধতি। আপনার পড়ার একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকবে নিশ্চয়ই। সেই পরিকল্পনা এবং নোটের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো রঙিন মার্কার দিয়ে চিহ্নিত করুন। বিভিন্ন ধরনের অংশের জন্য বিভিন্ন রঙ ব্যবহার করা বুদ্ধিমানের কাজ। যেমন – কুইজের অংশ গোলাপি, বিভিন্ন টেস্টের জন্য হালকা সবুজ, আন্ডারলাইন করা অংশ হালকা নীল ইত্যাদি। এই ‘কালার কোড’ সিস্টেম আপনার পড়াশোনাকে সুসংগঠিত রাখতে দারুণ সহায়ক।
২. পর্যাপ্ত সময় বরাদ্দ করুন:
সেমিস্টারের আগের রাতে বা পরীক্ষার ঠিক আগে সব পড়া শেষ করা প্রায় অসম্ভব। তাই হাতে বেশ কিছু দিন সময় নিয়ে পড়া শুরু করুন। অল্প সময়ের মধ্যে শুধু পরীক্ষার ঝামেলা মেটানো যায়, কিন্তু সেই পড়ায় শেখা হয় না। এতে ভবিষ্যতে সমস্যায় পড়তে হবে। তাই পর্যাপ্ত সময় নিয়ে হালকা মেজাজে পড়লে যেমন শেখাটা ভালো হবে, তেমনি পরীক্ষা অনেক সহজ মনে হবে এবং ফলাফলও ভালো আসবে।
৩. শিক্ষকদের সঙ্গে পরামর্শ করুন:
আপনার শিক্ষকরা কখনোই আপনাকে ফিরিয়ে দেবেন না। কিছু শিক্ষককে হয়তো ভীতিকর মনে হতে পারে, কিন্তু দিনশেষে তিনিই আপনার শিক্ষক। শেখা বা পরামর্শের জন্য তাদের কাছে গেলে তারা তাদের শিক্ষার্থীকে সর্বোচ্চ যত্ন সহকারে সাহায্য করবেন। যেকোনো শিক্ষকই আপনার সমস্যা মেটাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। তাই পরীক্ষা সংক্রান্ত যেকোনো পরামর্শের জন্য শিক্ষকদের দ্বারস্থ হন। এতে ভালো ফল করা সহজ হবে।
৪. বইয়ে কি-পয়েন্ট হাইলাইট করুন:
অনেক পরীক্ষায় বই দেখে লেখার সুযোগ থাকে। এসব ক্ষেত্রে বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো আগে থেকেই হাইলাইট করে রাখুন। যদি বই দেখে লেখার সুযোগ নাও থাকে, তবুও পড়াশোনার সুবিধার জন্য নিজের বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ মার্কার দিয়ে হাইলাইট করে রাখুন। এতে সেগুলো বারবার দেখে নিতে সুবিধা হবে এবং দ্রুত রিভিশন দেওয়া যাবে।
৫. স্লাইড শো তৈরি করে পড়ুন:
ডিজিটাল পদ্ধতিতে পড়াশোনা করুন। বিশেষ নোটগুলোকে কম্পিউটারে স্লাইড শো বানিয়ে পড়ুন। এতে পড়া মনে রাখা সহজ হবে এবং সবকিছু মস্তিষ্কে ভালোভাবে গেঁথে যাবে।
৬. নিজস্ব পরিকল্পনা তৈরি করুন:
পড়াশোনাকে কার্যকর করতে একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অত্যন্ত জরুরি। পড়াশোনার বিষয়, পদ্ধতি এবং সময়সূচি নিয়ে নিজের মতো করে একটি পরিকল্পনা তৈরি করুন। তারপর সেই সময়সূচি অনুযায়ী পড়াশোনা চালিয়ে যান। এতে আপনার সময় ও শ্রম উভয়ই সাশ্রয় হবে।
৭. নিজের পরীক্ষা নিজেই দিন:
প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার মতো করে বন্ধুদের সাথে বা আপনি একাই পরীক্ষামূলকভাবে পরীক্ষা দিতে পারেন। এতে মূল পরীক্ষা নিয়ে আপনার মনে যে অজানা আশঙ্কা বা ভয় থাকে, তা অনেকটাই কেটে যাবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, এই ধরনের পরীক্ষামূলক পরীক্ষা মূল পরীক্ষার কাছাকাছি হয়ে থাকে।
৮. একই পড়া কয়েকবার পড়ুন:
একই বিষয় কয়েকবার করে দেখে নিন। এতে বিষয়টি আপনার মাথায় ভালোভাবে বসে যাবে। নোটের বিশেষ পয়েন্টগুলোতে বারবার চোখ বুলিয়ে নিন। এতে বারবার মুখস্থ করার প্রয়োজন হবে না। হাইলাইট করা অংশগুলোতেও নজর দিন। একবার মুখস্থ করে কয়েকবার শুধু দেখলেই তা প্রায় ঠোঁটস্থ হয়ে যাবে।
এই সহজ অথচ কার্যকর টিপসগুলো মেনে চললে আপনার পরীক্ষার ভয় যেমন দূর হবে, তেমনি একাডেমিক ফলাফলেও আসবে চোখে পড়ার মতো উন্নতি। তাই আর দেরি না করে আজ থেকেই শুরু করুন এই নতুন পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করা।