বাচ্চাদের চুল পাতলা হলে অনেকেই বলে থাকেন, “ন্যাড়া করালেই চুল ঘন হবে!” এমন কথা প্রায় প্রতিটি পরিবারেই শোনা যায়। অনেক বাবা-মা মনে করেন, বাচ্চাকে বারবার ন্যাড়া না করলে তার ভালো চুল গজাবে না। কিন্তু আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে এই প্রচলিত ধারণার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই বলে জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে চুলের যত্ন নিয়ে প্রচলিত কিছু ভুল ধারণার কথা তুলে ধরা হয়েছে, যা যুগ যুগ ধরে মানুষ বিশ্বাস করে আসছে। অথচ এই ভুল অভ্যাসের কারণে চুলের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আসুন, সেই ভুল ধারণাগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক:
১. রোজ তেল লাগালেই চুল তাড়াতাড়ি বাড়বে: অনেকেই হয়তো আপনাকে এই পরামর্শ দিয়েছেন যে প্রতিদিন নিয়ম করে মাথায় তেল লাগালে চুল দ্রুত বাড়ে। কিন্তু সত্যিটা এর ঠিক বিপরীত। সারাক্ষণ মাথার তালু তৈলাক্ত হয়ে থাকলে তাতে ধুলো-ময়লা বেশি জমে এবং এর ফলে চুল পড়ার সমস্যা আরও বাড়তে পারে। সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন তেল মালিশ করাই যথেষ্ট। এতে মাথার তালুর রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায় এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। তেল লাগানোর কিছুক্ষণ পর শ্যাম্পু করে নেওয়া জরুরি।
২. ন্যাড়া হলেই চুল ঘন হয়: অনেক বাবা-মা তাদের বাচ্চাদের ঘন চুল পাওয়ার আশায় একাধিকবার ন্যাড়া করিয়ে থাকেন। কিন্তু ন্যাড়া হলেই যে ঘন চুল গজাবে, এমন কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। চুল আসলে ফলিকল থেকে গজায়, যা মাথার তালুর কয়েক মিলিমিটার গভীরে অবস্থিত। মাথার চুল কামানোয় ফলিকলের উপর কোনোভাবেই প্রভাব পড়ে না। চুলের ঘনত্ব জিনগত এবং শারীরিক অন্যান্য কারণের উপর নির্ভরশীল।
৩. পাকা চুল তুললে বেশি হবে: চুল পেকে যাওয়ার একাধিক কারণ থাকতে পারে। তবে একটি পাকা চুল টেনে তুললে আরও বেশি চুল পাকতে শুরু করবে, এমন কোনো প্রমাণ এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তাড়াতাড়ি চুল পাকার প্রধান কারণ মূলত জিনগত এবং কিছুটা অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন।
৪. নিয়মিত চুল কাটলে চুল বাড়ে তাড়াতাড়ি: নিয়মিত চুল কাটার সঙ্গে চুল কত তাড়াতাড়ি বাড়বে বা কতটা ঘন হবে, তার কোনো সরাসরি সম্পর্ক নেই। তবে কয়েক মাস অন্তর চুল কাটার পরামর্শ দেওয়া হয়, যাতে চুলের ডগা ফেটে গেলে বা চুল নিচের দিকে খুব পাতলা হয়ে গেলে, তা কেটে ফেলা যায়। এতে চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকতে পারে, কিন্তু এর ফলে চুল তাড়াতাড়ি গজানোর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
সুতরাং, চুলের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রচলিত এই ভুল ধারণাগুলো ত্যাগ করা উচিত। চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সঠিক নিয়ম মেনে চলুন এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।