নেতিবাচক চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়লে তা নানান মানসিক জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগেই নিজের মানসিক যত্ন নেওয়া জরুরি।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট ‘মাই অনলাইন থেরাপি’র মনোবিজ্ঞানী ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা এলিনা টুরনি জানান, “যখন নেতিবাচক চিন্তাভাবনা একটি চক্রের মতো ঘুরতে থাকে, তখন তাকে ‘চিন্তার ফাঁদ’ বা ‘অপ্রয়োজনীয় চিন্তন প্রক্রিয়া’ বলা হয়। এর মধ্যে প্রধানত দেখা যায় বিপর্যয় (খারাপ কিছু ঘটবে এমন ধারণা), সাদা-কালো চিন্তা (কেবল ইতিবাচক বা কেবল নেতিবাচক চিন্তা) এবং আবেগিক যুক্তি (কোনো বিষয়ে ব্যক্তিগত অনুভূতির ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া)।”
সাধারণভাবে নেতিবাচক চিন্তা তেমন গুরুতর বিষয় না হলেও, যখন কেউ এই চিন্তার চক্রে আবদ্ধ হয়ে পড়েন, তখন তার প্রভাব দৈনন্দিন কাজকর্মের ওপর পড়তে শুরু করে। এই নেতিবাচক চিন্তার ভিত্তিতে কাজ করতে শুরু করলে তা ধীরে ধীরে নিজস্ব বিশ্বাসকেও প্রভাবিত করে এবং এভাবেই এই চক্র চলতেই থাকে।
তবে মনস্তত্ত্ববিদরা এই নেতিবাচক চিন্তা থেকে মুক্তির কিছু সহজ উপায় বাতলেছেন:
প্রথমেই নেতিবাচক চিন্তা বাদ দেবেন না: ‘জয় অ্যান্ড ফিয়ার’ বইয়ের লেখক ডা. কার্লা মারি ম্যানলি বলেন, “নেতিবাচক চিন্তার দিকে মনোযোগ দেওয়া এবং তাতে বিরতি দেওয়া জরুরি, তবে তা নিয়ে অতিরিক্ত ভাবনাচিন্তা করা বা তাতে আটকে যাওয়া উচিত নয়।” গবেষণায় দেখা গেছে, নেতিবাচক চিন্তাকে একেবারে বাদ দেওয়ার চেষ্টা না করে বরং সেগুলোকে মোকাবিলা করার কৌশল শেখা গুরুত্বপূর্ণ। এটি মানুষকে শক্তিশালী করে তোলে এবং পরবর্তীতে ইতিবাচক মনোভাবের মাধ্যমে নেতিবাচক চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।
শ্বাস নিতে ভুলবেন না: অতিরিক্ত চিন্তার চাপে মানুষ অনেক সময় শ্বাস নিতেও ভুলে যায়। এমন পরিস্থিতিতে চোখ বন্ধ করে ধীরে ধীরে চারবার গভীর শ্বাস নিন এবং ধীরে ধীরে ছাড়ুন। যখনই খুব বেশি মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা অনুভব করবেন, তখন নিজের প্রতি মনোযোগী হন এবং কিছুক্ষণ সময় নিয়ে শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন, এতে মন শান্ত হবে। ম্যানলি এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে সচেতন রাখতে প্রয়োজনে নোট লিখে চোখের সামনে রাখার পরামর্শ দেন।
নিজের সকল চিন্তাধারাকেই বিশ্বাস করবেন না: মাথায় কোনো চিন্তা আসা মানেই সেটি সত্যি ভেবে নেওয়ার কোনো কারণ নেই। চিন্তাভাবনা ক্রমাগত নেতিবাচক হতে থাকলে নিজেকেই সেই বিষয়ে প্রশ্ন করার পরামর্শ দেন টুরনি। আপনি যা ভাবছেন তার স্বপক্ষে কতটা যুক্তি আছে বা এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার আদৌ কোনো কারণ আছে কি না, তা ভেবে দেখুন। এছাড়াও, আপনি কি কেবল ঘটনার খারাপ দিকটাই দেখছেন নাকি সামগ্রিক বিষয়টি বিবেচনা করছেন, তা পুনরায় যাচাই করুন।
ইতিবাচক বার্তার দিকে মনোযোগ দিন: নিজেকে শান্ত রাখতে এবং শক্তিশালী অনুভব করতে ইতিবাচক কথা ও বার্তার দিকে মনোযোগ দিন। যেমন – “সব ঠিক হয়ে যাবে”, “সব কাজ ঠিক মতো হবে”, “আমি এটা করতে পারব” ইত্যাদি। ম্যানলি এই ধরনের ইতিবাচক বাক্য ওয়ালেট, আয়না বা সহজে চোখে পড়ে এমন কোনো স্থানে লিখে রাখার পরামর্শ দেন। মানসিক অবস্থা ভালো থাকলেও এই ইতিবাচক কথাগুলো স্মরণ করুন, যাতে মস্তিষ্ক এতে অভ্যস্ত হয় ও ইতিবাচক সাড়া দেয়। পরবর্তীতে খারাপ সময় কাটিয়ে উঠতে এই মন্ত্র বাক্যগুলি আত্মবিশ্বাস যোগাবে এবং শান্ত থাকতে সাহায্য করবে। প্রয়োজনে সেই ইতিবাচক বাক্য লেখা স্থানটি স্পর্শ করুন, এতে ভালো অনুভূতি কাজ করবে।
নিজেই নিজের বন্ধু হন: যখন নিজের সম্পর্কে খুব খারাপ চিন্তা মাথায় আসে, তখন ভাবুন আপনি কি আপনার কোনো বন্ধুর সম্পর্কে এমন কথা বলতেন? যদি নিজের বন্ধুর সঙ্গে বা তার সম্পর্কে এমন খারাপ কথা বলতে না পারেন, তাহলে নিজেকেও নিজের বন্ধু হিসেবে দেখুন এবং এই ধরনের নেতিবাচক চিন্তাভাবনা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। টুরানি আরও পরামর্শ দেন, “কোথা থেকে এই আত্মসমালোচনা আসছে তা খুঁজে বের করুন। পুরনো কোনো অভিজ্ঞতার প্রভাব বর্তমানে আপনার ওপর পড়ছে কি না, তাও খতিয়ে দেখুন।”
শান্তিপূর্ণ চিত্র চিন্তা করুন: মাথায় খারাপ কোনো চিন্তা এলে তা থেকে বেরিয়ে আসতে সুন্দর ও মনোরম কোনো জায়গার কথা কল্পনা করার পরামর্শ দেন ম্যানলি। খোলা মাঠ, নীরব সমুদ্র সৈকত অথবা ছায়াঘেরা পাহাড়ের চূড়ায় নিজেকে কল্পনা করুন। এমন শান্ত পরিবেশে নিজের পছন্দের কোনো প্রাণী বা বন্ধুর সঙ্গে নিজেকে কল্পনা করুন।
এই সহজ কৌশলগুলো অবলম্বন করে আপনি সহজেই নেতিবাচক চিন্তার জাল থেকে মুক্তি পেতে পারেন এবং একটি সুস্থ ও ইতিবাচক মানসিক জীবন যাপন করতে সক্ষম হবেন।