দাঁতের যত্ন? এ তো রোজকার সাধারণ ব্যাপার! কিন্তু এই ‘সাধারণ’ বিষয়টিকেই যদি নিয়মিত অবহেলা করেন, তবে দাঁতের স্বাস্থ্য নিয়ে চরম বিপদ আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। সম্প্রতি বেশ কিছু গবেষণায় যে চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে, তাতে চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার জোগাড়! দাঁতের স্বাস্থ্যের সঙ্গে নাকি সরাসরি যোগ রয়েছে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এমনকি মারণব্যাধি ক্যানসারের!
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মুখের ক্যানসার, যা প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে, তার মূল কারণগুলোর মধ্যে তামাক সেবনের পাশাপাশি দাঁতের প্রতি অযত্ন ও অবহেলা অন্যতম। অর্থাৎ, দাঁতের সঠিক পরিচর্যা না করাটা আপনার অজান্তেই ভয়াবহ পরিণতির দিকে ঠেলে দিতে পারে।
ভারতের উদ্বেগজনক চিত্র: মাত্র ৪৫% মানুষ দ্বিগুণ ব্রাশ করেন!
ওরাল হেলথ অবজারভেটরির একটি সমীক্ষা ভারতের দাঁতের স্বাস্থ্যের এক উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরেছে। যেখানে চিন, কলম্বিয়া, ইতালি ও জাপানের মতো দেশে ৭৮-৮৩ শতাংশ মানুষ দিনে দু’বার দাঁত ব্রাশ করেন, সেখানে ভারতে মাত্র ৪৫ শতাংশ মানুষ এই নিয়ম মেনে চলেন! এই সমীক্ষায় আরও ধরা পড়েছে, যাদের মধ্যে মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি, তাদের দাঁতের ক্যাভিটি বেশি হয়। আর এই ক্যাভিটি থেকেই আলসার, শরীরে ভিটামিন বি ও আয়রনের ঘাটতির মতো জটিল সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এই মারণচক্র থেকে মুক্তি পেতে এবং দাঁতের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখতে কিছু সহজ কিন্তু অত্যাবশ্যকীয় নিয়ম মেনে চলা জরুরি:
- নিয়মিত ও সঠিক ব্রাশ: প্রতিদিন দু’বার, কমপক্ষে দু’মিনিট ধরে দাঁত ব্রাশ করুন – সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং রাতে খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট পরে। অবশ্যই নরম ব্রাশ ব্যবহার করবেন এবং প্রতি তিন মাস অন্তর ব্রাশ পরিবর্তন করবেন। ব্রাশ করার সময় পাশ থেকে পাশ নয়, বরং উপর-নীচ গতিতে ব্রাশ করুন।
- খাবারের পর পরিচর্যা: যেকোনো খাবার খাওয়ার পরে ভালো করে জল দিয়ে কুলকুচি করুন এবং আঙুল দিয়ে মাড়ি ম্যাসাজ করুন। এতে দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা কণা দূর হবে এবং মাড়ির রক্ত সঞ্চালন ভালো হবে।
- খাদ্যাভ্যাস ও পানীয়: খুব মিষ্টিজাতীয় বা আঠালো খাবার ও পানীয় এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলো দাঁতে দ্রুত ব্যাকটেরিয়া জমা করে। বেশি করে জল পান করুন, যা মুখ পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। লেবু ও পেয়ারা জাতীয় ফল বেশি করে খাওয়া উচিত, কারণ এতে দাঁতের জন্য উপকারী ভিটামিন ও ফাইবার থাকে।
- বিশেষ সতর্কতা: কারও মুখে বেশি ধারালো দাঁত থাকলে, তা দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শে ঘষে ঠিক করে নিতে হবে। কারণ, এই ধারালো অংশ মুখের অভ্যন্তরে ক্ষত তৈরি করতে পারে, যা ভবিষ্যতে আরও বড় সমস্যার কারণ হতে পারে।
আপনার মুখের স্বাস্থ্যকে আর অবহেলা নয়। কারণ, চকচকে দাঁত শুধু সুন্দর হাসিরই প্রতীক নয়, এটি আপনার সামগ্রিক সুস্থতারও নির্দেশক। সামান্য সচেতনতাই আপনাকে বাঁচিয়ে দিতে পারে বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে।