বর্তমানে যানজটের কারণে নির্দিষ্ট সময়ে কোথাও পৌঁছানো যেন অসম্ভব এক সত্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়িতে বসে থেকে যেমন ধৈর্যের পরীক্ষা দিচ্ছেন, তেমনি সময়ের অপচয়ও হচ্ছে অনেক। এ কারণে নারী-পুরুষ সবার কাছেই দুই চাকার বাহনগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। দামও সাধ্যের মধ্যে থাকায় এর ব্যবহার বাড়ছে। এছাড়া যারা হুটহাট পাহাড় কিংবা সমুদ্রে ছুটে যেতে চান, তাদের জন্য দুই চাকার এই যান প্রথম পছন্দ। তবে যারা নতুন বাইক কিনতে চান, তাদের কিছু বিষয় মাথায় রাখা খুবই জরুরি। এসব বিষয় এড়িয়ে গেলে ঠকে যেতে পারেন যেকোনো সময়। চলুন জেনে নেওয়া যাক বাইক কেনার আগে যেসব বিষয় মাথায় রাখবেন:
১. বাজেট নির্ধারণ: আপনার সাধ্যের মধ্যে আছে তো?
মোটরসাইকেল অথবা স্কুটার কেনার জন্য আপনি কত টাকা খরচ করবেন, তা আগে থেকে ঠিক করে নিন। বেশিরভাগ সময় ব্যাংক লোনের মাধ্যমে মোটরসাইকেল কেনা হয়। তাই কত টাকা মাসিক কিস্তি দিতে পারবেন ও আপনার কাছে কত সেভিং রয়েছে, তার ওপর নির্ভর করছে আপনার মোটরসাইকেল কেনার বাজেট। এছাড়া আপনি একটি স্কুটার অথবা মোটরসাইকেল অন্তত ২-৩ বছর চালাবেন, তাই রক্ষণাবেক্ষণের খরচও মাথায় রাখতে হবে। চালানোর জন্য নিয়মিত পেট্রল ভরতে হবে, যা আপনার মাসিক খরচের অংশ।
২. নতুন নাকি পুরোনো: প্রথমবার হলে পুরোনোতেই বুদ্ধিমানের কাজ
আপনার বাজেট ও অন্যান্য চাহিদার উপরে এই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করছে। আপনি যদি প্রথমবার নিজের স্কুটার অথবা মোটরসাইকেল কেনেন, তবে পুরোনো স্কুটার অথবা মোটরসাইকেল কেনা বেশি বুদ্ধিমানের কাজ হবে। একবার চালানো শিখে গেলে ১-২ বছর পরে তা বিক্রি করে একটি নতুন মোটরসাইকেল কিনতে পারেন। পুরোনো বাইকে প্রাথমিক ভুলের জন্য ক্ষতির পরিমাণ কম হয়।
৩. ব্র্যান্ড নির্বাচন: নির্ভরযোগ্যতার ওপর গুরুত্ব দিন
মোটরসাইকেল কেনার সময় কোন ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল কিনবেন, এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়ে আপনি আপনার পরিবার বা বন্ধু মহলে যাদের বাইক আছে, তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারেন। নতুন মোটরসাইকেল কেনার ক্ষেত্রে সর্বদা নির্ভরযোগ্য এবং জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলের উপর গুরুত্ব দেওয়া ভালো। এতে আপনার গাড়ির নিরাপত্তা এবং স্থায়িত্ব নিশ্চিত হয়।
৪. মডেল ও মাইলেজ: আরাম ও জ্বালানি সাশ্রয়ের সমন্বয়
দুই চাকার কোন মডেল কিনবেন, তা ঠিক করা খুবই কষ্টকর কাজ। মোটরসাইকেল যেন আরামদায়ক হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও মোটরসাইকেলের ওজন আপনার শারীরিক ক্ষমতার মধ্যে থাকতে হবে। এ ছাড়াও পেট্রোলের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে আপনাকে নজর দিতে হবে মাইলেজের দিকেও। মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে এক লিটার পেট্রোলে ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত পথ চলা সম্ভব, এমন মডেল খুঁজে বের করা বুদ্ধিমানের কাজ।
৫. ওজন: নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন তো?
বাইক কেনার আগে অবশ্যই এর ওজনটা কেমন, তা পরীক্ষা করে নিন। কেননা গাড়ির ওজন বেশি হলে তা সামলানো মুশকিল হতে পারে আপনার জন্য। সাধারণত এসব গাড়ি খুব হালকা হয়, ফলে যাদের ওজন বেশি, তারা এই গাড়ি চালালে সমস্যা হতে পারে। তা ছাড়া গাড়ির পিছনে আরও কাউকে বসালে, তার ওজনও বহনের ক্ষমতা আপনার গাড়ির রয়েছে কি না, তা জেনে নিন।
৬. একাধিক ডিলারের কাছে যান ও দর-দাম করুন
মোটরসাইকেল কেনার আগে একের বেশি ডিলারের কাছে যান। দাম শোনার পরে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কিছুটা সময় চেয়ে নিন। অন্তত ২-৩টি ডিলারের কাছে দাম শুনে তবেই কেনার সিদ্ধান্ত নিন। শোরুম থেকে কেনার খরচ ও রেজিস্ট্রেশনের খরচ আলাদাভাবে জানুন। কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ডিলারকে দাম কমানোর অনুরোধ করুন। ক্যাশে কিনলে কত সস্তা হবে তা জিজ্ঞাসা করুন। কয়েক জায়গা থেকে যেহেতু দাম সম্পর্কে আপনার ধারণা হয়েছে, সেহেতু একটু দামাদামি করে কম দামে নিতে পারবেন।
৭. টেস্ট রাইড নিন ও মুখের কথা বিশ্বাস করবেন না
আপনি নিজে চালাতে না জানলে সঙ্গে এমন একজন বন্ধুকে রাখুন যিনি দুই চাকার গাড়ি চালাতে পারেন। চেষ্টা করুন হাইওয়ে ও শহরের রাস্তায় টেস্ট রাইড নিতে। এতে গাড়ির হ্যান্ডলিং, ব্রেকিং এবং সামগ্রিক পারফরম্যান্স সম্পর্কে ধারণা পাবেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, মোটরসাইকেল কেনার আগে প্রত্যেকটি জিনিসের দাম আলাদা আলাদা করে জেনে নিন। শুধু বিক্রেতার মুখের কথায় বিশ্বাস করবেন না, সমস্ত শর্তাবলী লিখিতভাবে বুঝে নিন।