বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে করোনারি হৃদরোগের ৫৪ ভাগ দায়ী হলো ধূমপান। গবেষণায় দেখা গেছে, অন্য যে কারো চেয়ে একজন ধূমপায়ীর হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা ছয় গুণেরও বেশি। এমনও দেখা গেছে যারা করোনারি হৃদরোগে ভুগছেন, সিগারেট খেতে গিয়ে হার্ট অ্যাটাকে তাদের মৃত্যু হয়েছে। সম্প্রতি হু জানিয়েছে, অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীদের কোভিড-১৯ সংক্রমণে মারাত্মকভাবে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এ ছাড়া গবেষণা দেখা গেছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ধূমপায়ীর মৃত্যুঝুঁকিও ১৪ গুণ বেশি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বার বার অনুরোধ করছেন, এই পরিস্থিতিতে ধূমপান ছেড়ে দিতে। একই আবেদন জানিয়েছেন ‘ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল’।
তাই ধূমপান বর্জন করা খুবই জরুরি। আপনি একটি কার্যকর পদ্ধতি অনুসরণ করে ধূমপান থেকে মুক্ত হতে পারেন। গত দুই দশকে অসংখ্য মানুষ এ পদ্ধতিটি অনুসরণ করে ধুমপানের বদভ্যাস থেকে পুরোপুরি মুক্ত হয়েছেন। এবার জেনে নেওয়া যাক এই পদ্ধতিটি সম্পর্কে
১. ধূমপান ছাড়ার জন্যে বাস্তবে কোনো দৃঢ় প্রতিজ্ঞার প্রয়োজন নেই। এজন্যে নিজের ইচ্ছা আর সিদ্ধান্তটাই যথেষ্ট।
২. অনেকেই সিগারেট ছাড়ার কথা ভেবে পকেটে সিগারেট রাখেন না। ভাবেন, পকেটে থাকলেই খেতে ইচ্ছে করবে। তারা বুঝতে পারেন না যে, সাথে না থাকলে ধূমপানের ইচ্ছেটা আরও বেশি হবে। পকেটে সিগারেট না রাখলে দেখা যাবে, আপনি অন্যের কাছ থেকে সিগারেট চেয়ে নিচ্ছেন। তাই সিগারেট ও ম্যাচ পকেটেই রাখুন।
৩. আপনি শুধু খেয়াল রাখুন, কখন আপনি সিগারেট ধরান। ধূমপানের ইচ্ছা একেকজনের মধ্যে একেক সময়ে জাগে। কেউ টেলিফোনে আলাপ করতে করতে, কেউ কোনো আলোচনার শুরুতে, কেউ টিভি দেখার সময়, কেউ খাবারের পর পর, কেউ-বা আবার চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে সিগারেট ধরান। এ সময়গুলোতে তিনি অনেকটা নিজের অজান্তেই সিগারেট ধরিয়ে ফেলেন।
৪. আজ থেকে আপনি কেবল অন্য কাজ করার সময় ধূমপান করা থেকে বিরত থাকুন। যদি সিগারেট ধরিয়ে ফেলার পর খেয়াল হয় যে, আপনি সিগারেট ধরিয়ে ফেলেছেন, তাহলে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, আপনি এখন সত্যি সত্যি সিগারেট খেতে চান কিনা।
৫. যদি সত্যি সত্যিই সিগারেট খাওয়ার ইচ্ছা হয়, তাহলে অন্য সব কাজ বাদ দিয়ে চুপচাপ আরাম করে বসুন। চুপচাপ বসে সিগারেট খান। মনোযোগ দিয়ে সিগারেট খান।
৬. সিগারেট খাওয়ার সময় শরীরের প্রতি মনোযোগ দিন। চোখ বন্ধ করে সিগারেটে টান দিয়ে অবলোকন করুন, সিগারেটের ধোঁয়া নাক দিয়ে যাচ্ছে। যেতে যেতে তা একটা গোখরা সাপের আকার ধারণ করছে। ফুসফুসে গিয়েই ফণা তুলে ছোঁবল মারছে আর ঢেলে দিচ্ছে নিকোটিন নামের বিষ। একটা বিষাক্ত সাপ ছোঁবল মারলে আপনার দেহ-মনে যে অনুভূতি সৃষ্টি হতো ক্ষণিকের জন্যে সে অনুভূতি সৃষ্টি করুন। স্বতঃস্ফূর্তভাবে সে অনুভূতি না এলে অভিনয় করুন। (মনে করুন, মঞ্চে নাটক করছেন। নাটকে আপনাকে অভিনয় করতে হচ্ছে সাপে আক্রান্ত পথিকের ভূমিকায়। সত্যি সত্যি সাপ ছোঁবল মারলে আপনার যে মনোদৈহিক প্রতিক্রিয়া হতো, তা-ই করুন।) মনের চোখে আপনার নাক মুখ গলা হৃৎপিণ্ড পাকস্থলীর প্রতিক্রিয়া অবলোকন করুন।
৭. পুনরায় সিগারেটে টান দিন। অবলোকন করুন, আরেকটা গোখরা সাপ ফুসফুসের দিকে যাচ্ছে। পূর্বের প্রক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি করুন।
৮. এ পদ্ধতিতে পুরো সিগারেট শেষ করুন। এই পুরো প্রক্রিয়ায় আপনার যে অনুভূতি হলো তা একটি কাগজ বা ডায়েরিতে লিখে রাখুন। শুধু মনে রাখুন, অন্যের সামনে বা অন্য কোনো কাজ করতে করতে সিগারেট খাবেন না।
এই প্রক্রিয়ায় কয়েকটি দিন অনুশীলন করুন। পরে যে অনুভূতি হবে তাতে আর সিগারেট খেতে ইচ্ছে করবে না আপনার।