দুধ পান থেকে সমস্যা? জেনে নিন পুষ্টিকর বিকল্প ও তাদের উপকারিতা!

প্রকৃতির অন্যতম পুষ্টিকর খাবার হলো দুধ। কিন্তু সবার শরীরেই এটি সমানভাবে মানিয়ে নেয় না। অনেকেরই দুধ পানে পেটের সমস্যা, অ্যালার্জি বা অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা যায়। আবার ভেজাল দুধের ভয় কিংবা গরুকে হরমোন ও অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের কারণেও অনেকে দুধের বিকল্প ভাবতে শুরু করেছেন। এনডিটিভি-র এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুধের এমন কিছু বিকল্প রয়েছে যা পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং আপনার স্বাস্থ্যগত সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে।

কেন দুধের বিকল্প দরকার?
গরু, ছাগল বা অন্যান্য প্রাণীর দুধে অনেকেরই অ্যালার্জি এবং পেটের সমস্যা হয়, যা তাদের দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করে। ভারতীয় চিকিৎসক সাক্ষী হারি খান্না জানান, “৭০ শতাংশ ভারতীয়ের রয়েছে দুধের প্রতি অ্যালার্জি। দুধ খাওয়ার ফলে আপনার ত্বক সমস্যা, চুলকানি ও এ ধরনের এমন সব সমস্যা হতে পারে যা আপনি হয়ত অনুধাবন করতে পারেন না।”

এছাড়াও, বর্তমানে দুধে ভেজাল মেশানোর খবর প্রায়শই পাওয়া যায়, যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। গরুর দুধের দাম বৃদ্ধি এবং খামারিদের দ্বারা গরুকে অতিরিক্ত ওষুধ ও হরমোন প্রয়োগের ফলে দুধের পুষ্টিগুণ কমে যাওয়া এবং মানুষের দেহে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির সম্ভাবনাও থাকে। এই সমস্ত কারণে দুধের বিকল্প সন্ধান করাটা জরুরি হয়ে পড়েছে।

সাক্ষী হারি খান্না আরও উল্লেখ করেন, “ব্রোকলিতে রয়েছে দুধের তুলনায় বেশি ক্যালসিয়াম। সয়াবিনে রয়েছে দুধের তুলনায় বেশি প্রোটিন। এ কারণে আপনার শুধু যে দুধের ওপর নির্ভর করতে হবে, এমন কোনো কথা নেই।”

দুধের স্বাস্থ্যকর বিকল্পগুলো:
দুধ পানে যাদের সমস্যা হয়, তাদের জন্য বেশ কিছু পুষ্টিকর বিকল্প রয়েছে:

১. দই
দুধ পানে সমস্যা হলে দই একটি সহজ এবং পুষ্টিকর বিকল্প হতে পারে। এটি যথেষ্ট পুষ্টিকর এবং সহজে হজম হয়। ডাক্তার রুপালি দত্ত পরামর্শ দেন, “দুধ পরিপূর্ণ পুষ্টি দেয়। তবে বিভিন্ন কারণে আপনার দুধ পানে সমস্যা হতে পারে। আর এ ধরনের পরিস্থিতিতে আমার পরামর্শ হলো সেরিয়াল গ্রহণ করতে। দই হতে পারে একটি ভালো বিকল্প। এটি তুলসি পাতার সঙ্গে খেলে সহজেই হজম হবে।”

২. অ্যামন্ড বা কাঠবাদামের দুধ
অ্যামন্ড বা কাঠবাদাম থেকে তৈরি দুধ একটি দারুণ বিকল্প। এটি অ্যামন্ড চূর্ণ ও জলের সংমিশ্রণে তৈরি হয় এবং বেশ মজাদারও বটে। এতে আলকালাইন রয়েছে, যা পেটে সহজেই হজম হয়। যদিও এতে গরুর দুধের মতো প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম সরাসরি নাও থাকতে পারে, তবে কলা, খেজুর ইত্যাদি মিশিয়ে এর পুষ্টিগুণ বাড়ানো সম্ভব।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিন শুরু করার জন্য এক গ্লাস অ্যামন্ড দুধ একটি আদর্শ পানীয় হতে পারে। এতে ক্যালরি ও কোলেস্টেরল কম থাকে এবং এটি জুসের একটি ভালো বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে। অ্যামন্ড দুধ গরুর দুধের মতো পুষ্টিকর না হলেও, কিছু পুষ্টিকর উপাদান মিশিয়ে একে গরুর দুধের মতোই পুষ্টিকর করা সম্ভব।

৩. সয়া দুধ
সয়াবিন থেকে শুধু তেলই নয়, দুধও তৈরি করা যায়, যা দেখতে ও স্বাদে অনেকটাই গরুর দুধের কাছাকাছি। এই ‘সয়া দুধ’ যথেষ্ট সম্ভাবনাময় একটি বিকল্প। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সয়া দুধে গরুর দুধের চেয়ে আমিষের (প্রোটিন) পরিমাণ যথেষ্ট বেশি থাকে। এতে লেসিথিন নামক একটি উপাদান আছে যা স্মরণশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।

প্রতি ১০০ গ্রাম সয়াবিনে ৪৩ গ্রাম আমিষ থাকে। এছাড়াও, এতে রয়েছে শরীরে শক্তি উৎপাদনকারী চর্বি, দাঁত ও হাড় গঠন এবং হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধকারী ক্যালসিয়াম, রক্তশূন্যতা ও শরীরের দুর্বলতা প্রতিরোধকারী লৌহ, এবং রাতকানা ও চক্ষুরোগ প্রতিরোধক ভিটামিন ‘এ’। সয়া দুধ পশ্চিমা দেশগুলোতে যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবং দুধের বিকল্প হিসেবে এটি একটি চমৎকার পছন্দ।

সুতরাং, দুধ পান করতে অপারগ হলেও চিন্তার কিছু নেই। এই পুষ্টিকর বিকল্পগুলো আপনার দৈনন্দিন পুষ্টির চাহিদা মেটাতে সহায়ক হবে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy