থ্যালাসেমিয়া: বংশগত রোগ, সচেতনতাই মুক্তির পথ!

থ্যালাসেমিয়া একটি জিনগত রোগ, যা বংশ পরম্পরায় শিশুর শরীরে প্রবেশ করে। এই রোগের কারণে শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ক্রমশ কমতে থাকে। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের রক্তে লোহিত রক্তকণিকা ও হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়। এর ফলস্বরূপ স্বাভাবিকভাবেই রক্তাল্পতার (অ্যানিমিয়া) সমস্যা দেখা দেয়। তবে একটু সচেতন হলেই থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি বাবা ও মা উভয়েই থ্যালাসেমিয়ার বাহক হন, তাহলে সন্তানের থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। নবজাতক শিশুরা যাদের এই সমস্যা থাকে, তারা জন্মের সময় বেশ স্বাস্থ্যবান হলেও, প্রথম দু’বছরের মধ্যেই রোগের উপসর্গগুলো প্রকাশ পেতে শুরু করে। তবে এটি মনে রাখা জরুরি যে, থ্যালাসেমিয়া কোনোভাবেই ছোঁয়াচে রোগ নয়।

যদি স্বামী-স্ত্রী দু’জনই থ্যালাসেমিয়ার বাহক হন অথবা তাদের মধ্যে একজন থ্যালাসেমিয়ার বাহক এবং অন্যজন হিমোগ্লোবিন ই-র বাহক হন, সেক্ষেত্রে গর্ভাবস্থাতেই প্রায় ২৫ শতাংশ শিশু এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়াও, ৫০ শতাংশ শিশুর এই রোগের বাহক হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে চিকিৎসকদের মতে, বাকি ২৫ শতাংশ শিশু সম্পূর্ণ সুস্থভাবে জন্ম নিতে পারে। অন্যদিকে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একজন সুস্থ থাকলে, নবজাতকের থ্যালাসেমিয়া হওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে না, তবে থ্যালাসেমিয়ার বাহক হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়।

থ্যালাসেমিয়ার লক্ষণ:

থ্যালাসেমিয়ার প্রধান লক্ষণ হলো রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া। এর পাশাপাশি হলদে ত্বক বা জন্ডিস, শরীরে অতিরিক্ত আয়রন জমা হওয়া, ঘন ঘন সংক্রমণ, প্লীহা বড় হয়ে যাওয়া, মুখের হাড়ের বিকৃতি (মঙ্গলয়েড ফেসিস), শারীরিক বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া, পেট বাইরের দিকে প্রসারিত হওয়া, গাঢ় রঙের প্রস্রাব এবং হৃৎপিণ্ডের সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে যা করবেন:

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন, এই রোগের বাহকদের একে অপরকে বিয়ে না করাই শ্রেয়। সেই কারণে বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা উচিত। এই বিষয়ে সকলের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা অপরিহার্য। তবেই এই রোগকে অনেকাংশে দূরে রাখা সম্ভব।

যদি দু’জন থ্যালাসেমিয়ার বাহকের বিয়ে হয়েও যায়, সেক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের রক্ত পরীক্ষা করানো উচিত। গর্ভস্থ সন্তান থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত কি না, তা জানার জন্য কোরিয়োনিক ভিলাস স্যাম্পলিং, অ্যামনিওসেনটেসিস ও ফিটাল ব্লাড স্যাম্পলিং-এর মতো পরীক্ষাগুলো করানো প্রয়োজন।

পরিবারের কোনো একজন সদস্য থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলে, পরিবারের বাকি সদস্যদেরও রক্ত পরীক্ষা করানো উচিত।

চিকিৎসকদের মতে, থ্যালাসেমিয়া মানেই জীবনের শেষ নয়। নিয়মিত চিকিৎসা করালে সুন্দরভাবে জীবনযাপন করা সম্ভব। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা বিয়ে করে সংসারও করতে পারেন এবং সন্তান ধারণেও তেমন কোনো সমস্যা হয় না। তবে এক্ষেত্রে নিজেকে নিজের যত্ন নিতে হবে এবং সচেতন থাকতে হবে, যাতে আর কোনো থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর জন্ম না হয়।

থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধের জন্য ব্যাপক প্রচারের প্রয়োজন। সাধারণ মানুষকে সচেতন করাও জরুরি। তবেই হয়তো এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy