তুলসি পাতা, এক উপকারী ভেষজ, যার গুণের কথা প্রায় সবারই জানা। অনেক বাড়ির আঙিনা, ছাদ কিংবা বারান্দায় দেখা যায় এই মহৌষধ গাছটি। প্রাচীনকাল থেকেই ওষুধ হিসেবে তুলসি পাতার ব্যবহার হয়ে আসছে। এই পাতায় থাকা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ সহ মারাত্মক সব রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম। তবে এর উপকারিতার পাশাপাশি কিছু অপকারিতাও রয়েছে। চলুন, জেনে নেওয়া যাক তুলসি পাতার নানা উপকারিতা এবং কখন এটি এড়িয়ে চলা উচিত।
তুলসি পাতার অসাধারণ উপকারিতা
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: তুলসি পাতা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। অ্যাজমা, ফুসফুসের সমস্যা, ব্রঙ্কাইটিস ইত্যাদি মোকাবিলায় এটি কার্যকর। জ্বর সারাতেও তুলসি পাতা সমান উপকারী। তুলসি পাতা ও এলাচ জলে ফুটিয়ে সেই জল পান করলে সহজেই বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ক্ষতস্থানে তুলসি পাতা বেটে লাগালে তা দ্রুত শুকিয়ে যায়।
ওজন নিয়ন্ত্রণ: তুলসি পাতা রক্তে সুগারের মাত্রা ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, তুলসি দিয়ে তৈরি ২৫০ মিলিগ্রামের একটি ক্যাপসুল প্রতিদিন খাওয়ার ফলে স্থূলতা (Obesity) ও লিপিড প্রোফাইল নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে যেকোনো ওষুধ সেবনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধ: তুলসি পাতা ইনসুলিন উৎপাদনে সাহায্য করে। প্রতিদিন খাওয়ার আগে তুলসি পাতা খেলে রক্তে সুগারের মাত্রা কমে। এতে থাকা স্যাপোনিন, ত্রিতারপিনিন ও ফ্ল্যাভোনয়েড ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কার্যকর।
সর্দি-কাশি উপশম: সর্দি ও কাশি সারাতে তুলসি পাতা অত্যন্ত কার্যকর। বুকে কফ জমে গেলে প্রতিদিন সকালে তুলসি পাতা, আদা ও চা পাতা ভালোভাবে ফুটিয়ে তাতে মধু ও লেবু মিশিয়ে পান করলে দ্রুত উপশম মেলে।
গলা ব্যথা দূর: গলা ব্যথার সমস্যায় তুলসি পাতা অত্যন্ত উপকারী। শ্বাসকষ্টের সমস্যা কমাতেও এটি কার্যকর। করোনা মহামারীর এই সময়ে নিয়মিত তুলসি পাতা খাওয়ার অভ্যাস করা যেতে পারে। কয়েকটি তুলসি পাতা ফুটিয়ে সেই জল দিয়ে গার্গল করলে গলা ব্যথা দ্রুত সেরে যায়।
ক্যান্সার প্রতিরোধ: তুলসি পাতায় থাকা রেডিওপ্রটেকটিভ উপাদান টিউমারের কোষগুলোকে মেরে ফেলতে সাহায্য করে। এতে থাকা ফাইটোকেমিক্যাল যেমন রোসমারিনিক এসিড, মাইরেটিনাল, লিউটিউলিন এবং এপিজেনিন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করতে কার্যকর। অগ্ন্যাশয়ের টিউমার কোষ এবং ব্রেস্ট ক্যান্সার দূরে রাখতেও তুলসি পাতা উপকারী।
তুলসি পাতা কখন এড়িয়ে চলবেন?
উপকারিতার পাশাপাশি তুলসি পাতার কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি এড়িয়ে যাওয়া বা না খাওয়াই উত্তম:
নিম্ন রক্তচাপ: তুলসি পাতায় অতিরিক্ত পটাশিয়াম থাকে, যা রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারে। তাই যারা নিম্ন রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের তুলসি পাতা না খাওয়াই ভালো।
গর্ভাবস্থা বা স্তন্যপান করানোর সময়: সামান্য তুলসি পাতা ক্ষতিকর না হলেও, গর্ভাবস্থা বা স্তন্যপান করানোর সময় অতিরিক্ত তুলসি পাতা খেলে নানা রকম জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই এই সময়গুলোতে তুলসি এড়িয়ে চলা উত্তম। এছাড়াও, অতিরিক্ত তুলসি পাতা নারীর ক্ষেত্রে বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে, তাই পরিমিত গ্রহণ করা উচিত।
রক্তপাতের সমস্যা: তুলসি পাতা অতিরিক্ত সেবন করলে তা শরীরে রক্তের প্রবাহ বাড়িয়ে দিতে পারে, ফলে স্বাভাবিক রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা নষ্ট হয়ে যায়। এর কারণে অতিরিক্ত রক্তপাতের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেকোনো সার্জারির দুই সপ্তাহ আগে থেকে তুলসি পাতা খাওয়া বন্ধ রাখা উচিত।