বর্তমান বিশ্বে ডায়াবেটিস একটি নীরব ঘাতক হিসেবে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, এবং প্রায় প্রতিটি পরিবারেই অন্তত একজন ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগী খুঁজে পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যকর বিএমআই (BMI) এবং সঠিক ওজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য ওজন কমানো প্রায়শই একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। এর পেছনে কিছু সুনির্দিষ্ট শারীরিক কারণ রয়েছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক, ঠিক কী কী কারণে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ওজন কমানো এত কঠিন হয়।
১. ইনসুলিন রেসিস্টেন্স (Insulin Resistance)
ডায়াবেটিস রোগীদের ওজন কমানোর পথে সবচেয়ে বড় বাধা হলো ইনসুলিন রেসিস্টেন্স। আমরা যখন কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার খাই, তখন রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ে। অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত ইনসুলিন এই গ্লুকোজকে রক্ত থেকে বের করে কোষগুলোতে পৌঁছে দেয়, যেখানে তা শক্তি উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।
কিন্তু টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে এই প্রক্রিয়া ঠিকভাবে কাজ করে না। তাদের শরীর ইনসুলিনের প্রতি প্রতিরোধী হয়ে ওঠে এবং ইনসুলিন রক্ত থেকে গ্লুকোজ সরানোর ক্ষেত্রে ততটা কার্যকরী থাকে না। ফলে কার্বোহাইড্রেট খাওয়ার পর তাদের রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়। রক্তের উচ্চ গ্লুকোজ কমাতে শরীর তখন আরও বেশি ইনসুলিন তৈরি করে। ইনসুলিনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো চর্বি সঞ্চয় করা এবং সঞ্চিত চর্বি থেকে চর্বি নিঃসরণ বন্ধ করা। এই অতিরিক্ত ইনসুলিনই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ওজন কমানো কঠিন করে তোলে।
২. সব সময় ক্ষুধা অনুভব করা
ডায়াবেটিস রোগীদের প্রায়শই ক্যালোরি নিয়ন্ত্রণ, কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ কমানো এবং অল্প অল্প করে খাবার খাওয়ার মতো পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে, এই পরামর্শগুলো অনুসরণ করলে অনেক সময় তাদের ক্ষুধা লাগে, যার ফলে বেশি খাওয়ার ইচ্ছে হয়।
কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার রক্তে শর্করার দ্রুত বৃদ্ধি ঘটায়। তাই এ ধরনের খাবার কম খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ কমে যেতে পারে, যা ঘন ঘন ক্ষুধাকে উদ্দীপিত করে। স্বাভাবিকভাবেই, ক্ষুধার্ত ব্যক্তি বেশি খাবার খাবে, যার ফলে ওজন বৃদ্ধি পায়। এটি ডায়াবেটিস রোগীদের ওজন কমানোর প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তোলে।
৩. ডায়াবেটিসের ওষুধ
ডায়াবেটিসের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত কিছু ওষুধও ওজন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। যেমন, ইনসুলিন চর্বি সঞ্চয় করতে সাহায্য করে, এবং ডায়াবেটিসের চিকিৎসার জন্য ইনসুলিন গ্রহণ করলে কিছু ওজন বাড়তে পারে। এছাড়াও, কিছু ওষুধ অগ্ন্যাশয়কে আরও ইনসুলিন উৎপাদনে উদ্দীপিত করে কাজ করে, যা পরোক্ষভাবে ওজন বাড়ানোর দিকে নিয়ে যেতে পারে।
রক্তে শর্করার মাত্রা কমানোর সর্বোত্তম উপায় হলো কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ কমানো। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট খাদ্যতালিকা এবং ওজন কমানোর পরিকল্পনা পেতে একজন পুষ্টিবিদের সাহায্য নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। সঠিক পরামর্শ এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তন এনে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব।