ডাইনিং টেবিল ছেড়ে মেঝেতে বসুন! প্রাচীন এই অভ্যাসেই লুকিয়ে সুস্থ জীবনের ৮ মহৌষধ, হার্ট ভালো রাখা থেকে ওজন কমানো!

শহুরে জীবনে ডাইনিং টেবিলে বসে খাবার খাওয়ার অভ্যাস এখন প্রায় সর্বজনীন। এর অনেক সুবিধা থাকলেও, এর কিছু ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে হয়তো অনেকেই অবগত নন। অথচ, প্রাচীন ভারতীয় রীতি অনুযায়ী মেঝেতে বাবু হয়ে বসে খাবার খেলে অসংখ্য স্বাস্থ্যগত উপকার পাওয়া যায়, যা হয়তো অনেকেই জানেন না। গ্রামে এখনো অনেক মানুষ এই অভ্যাসটি ধরে রেখেছেন, এবং চিকিৎসকরা বলছেন, এটি তাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক।

মেঝেতে বসে খাবার খাওয়ার এই সামান্য অভ্যাসটি যে শরীরের জন্য কতটা উপকারী, তা জানলে বিস্মিত হবেন। বিভিন্ন কঠিন রোগ থেকে মুক্তি, হার্টকে সুস্থ রাখা, জয়েন্টের ব্যথা কমানো এবং এমনকি ওজন কমানোর মতো সুফলও মেলে এই ছোট্ট অভ্যাসে।

চিকিৎসকদের মতে, এই অভ্যাস আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর অনেক ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। মেঝেতে বাবু হয়ে বসে খাওয়ার সময় আমাদের শরীরের ভিতরে এমন কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে, যার প্রভাবে নিম্নলিখিত উপকারগুলো পাওয়া যায়:

১. মানসিক চাপ হ্রাস ও একাগ্রতা বৃদ্ধি:
মেঝেতে বসে খাবার খেলে মানসিক চাপ দূর হয় এবং কাজের প্রতি একাগ্রতা বাড়ে। ডাইনিং টেবিল-চেয়ারে বসে খেলে এই উপকারিতাটুকু আপনার শরীর পাবে না। বসে খাওয়ার সময় যখন এক পা অন্য পায়ের ওপর রেখে পদ্মাসনের ভঙ্গিতে থাকা হয়, তখন অ্যাবডোমেনের মাসেলে টান পড়ে, যার ফলে মানসিক চাপ থেকে মুক্তি মেলে।

২. দ্রুত হজম:
মেঝেতে বাবু হয়ে বসে খেলে খাবার দ্রুত হজম হয়। যাদের হজমজনিত সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য বসে খাওয়ার উপকারিতা অনেক। মেঝেতে বসে খাবার খাওয়ার সময় মাথা সামান্য ঝুঁকে আবার সোজা হয়ে বসার এই স্বাভাবিক অভ্যাসটি বারবার ঘটে বলেই হজম প্রক্রিয়া দ্রুত ও মসৃণ হয়।

৩. অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সুস্থতা ও রক্ত সঞ্চালন:
মেঝেতে খাওয়ার আরও এক উপকারিতা হলো দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঠিক ভঙ্গিতে থাকে। এতে করে দেহ অনেক সমস্যা কাটিয়ে ওঠে। পেশী শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি সঠিক ভঙ্গিতে বসার কারণে শরীরে রক্ত সঞ্চালনের উন্নতি ঘটে। এতে হৃৎপিণ্ডকেও কম পরিশ্রম করতে হয়।

৪. মেরুদণ্ড ও শ্বাস-প্রশ্বাসের উপকার:
মেঝেতে বসে খাবার খেলে মেরুদণ্ডের নীচের অংশে জোর পড়ে, যা আপনার শ্বাসের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। এটি পেশীগুলোর স্ট্রেন এবং রক্তচাপ হ্রাস করে, যা সামগ্রিক সুস্থতার জন্য উপকারী।

৫. জয়েন্টের ব্যথা থেকে মুক্তি:
অনেকেই জয়েন্টের ব্যথায় কাবু থাকেন। জানেন কি, মাটিতে বসে খাবার খেলে জয়েন্টের ব্যথা থেকেও মুক্তি মেলে? কারণ এজন্য আপনার হাঁটু বাঁকাতে হয়, এতে হাঁটুর অনুশীলনও হয়ে যায়। মেঝেতে বসে খাবার খাওয়া হিপ সন্ধি, হাঁটু এবং গোড়ালিকে নমনীয় করে তোলে, যা জয়েন্টের ব্যথার সমস্যা এড়াতে সাহায্য করে।

৬. হার্টের স্বাস্থ্য সুরক্ষা:
শরীরের সুস্থতা বজায় রাখতে রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখার কোনো বিকল্প নেই। মেঝেতে বসে খাবার খেলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন ঠিক থাকে এবং এটি হার্টের চারপাশের চাপ হ্রাস করে। আপনি যদি হার্টের রোগী হন, তাহলে ডাইনিং টেবিল বা চেয়ারে বসে না খেয়ে মেঝেতে বসে খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ুন।

৭. কোমর থেকে মেরুদণ্ড পর্যন্ত উপকার:
বাবু হয়ে বসে খাওয়ার অভ্যাস করলে কোমর, পা থেকে মেরুদণ্ড পর্যন্ত সবকিছুই উপকৃত হয়। এটি শরীরের সঠিক অ্যালাইনমেন্ট বজায় রাখতে সাহায্য করে।

৮. দ্রুত ওজন হ্রাস:
ওজন কমাতে সবাই কতকিছুই না করেন! বাবু হয়ে বসে খাবার খেলে দ্রুত ওজনও কমে। এতে অ্যাবডোমেনের মাসেলের মুভমেন্ট হয়, যা পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও, বসে খাবার খাওয়ার সময় আপনি চাইলেও বেশি খেতে পারবেন না, কারণ শরীর দ্রুত তৃপ্তির সংকেত দেয়। সব মিলিয়ে ওজন কমাতেও এই পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকরী।

আধুনিক জীবনে কিছু প্রাচীন অভ্যাস ফিরিয়ে আনলে তা আমাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার ক্ষেত্রে এক নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। তাই আজই মেঝেতে বসে খাবার খাওয়ার অভ্যাস শুরু করুন এবং এর অসাধারণ সুফলগুলো উপভোগ করুন।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy