হৃৎপিণ্ডের করোনারি ধমনীতে হঠাৎ রক্ত সরবরাহ কমে গেলে বা ব্লক হয়ে গেলে হার্ট অ্যাটাক হয়, কারণ হার্টে অক্সিজেনের সরবরাহ কমে যায়। হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বয়স, পারিবারিক ইতিহাস, রক্তচাপ, কোলেস্টেরলের মাত্রার ওপর নির্ভর করলেও, সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো বলছে স্নানের ভুল অভ্যাসও এই ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণসমূহ:
হার্ট অ্যাটাক হলে বুকের মাঝখানে বা বাম দিকে তীব্র ব্যথা বা চাপের মতো অস্বস্তি হতে পারে। এই অস্বস্তি কয়েক মিনিটের বেশি স্থায়ী হতে পারে, আবার চলে গিয়ে পুনরায় ফিরেও আসতে পারে। এর সঙ্গে প্রায়শই শ্বাসকষ্ট হয়।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, চরম ক্লান্তি বা দুর্বলতা অনুভব করা এবং কিছু ক্ষেত্রে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া। বুকের ব্যথা হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম প্রধান লক্ষণ হলেও, এই ব্যথা চোয়াল, পিঠ, ঘাড়, বাহু বা কাঁধেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। অনেক সময় বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে, যা অনেকে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা মনে করে ভুল করেন।
ঠান্ডা জলে স্নান ও হার্ট অ্যাটাকের সম্পর্ক:
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা জানাচ্ছে, হঠাৎ ঠান্ডা জলে স্নান করলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়তে পারে। বেশ কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, হঠাৎ করে শরীরের ঠান্ডা জলের সংস্পর্শে আসা বিপজ্জনক হতে পারে, বিশেষ করে হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য এই অভ্যাস একেবারেই ঠিক নয়।
যখন হঠাৎ করে শরীরে অতিরিক্ত ঠান্ডা জল ফেলা হয়, তখন ত্বকের রক্তনালীগুলো সংকুচিত হয়ে যায়। এর ফলে শরীরের রক্তপ্রবাহ সাময়িকভাবে ধীর হয়ে যায় এবং হৃদপিণ্ড দ্রুত কাজ করে শরীরের চারপাশে রক্ত পাম্প করার জন্য। এতে হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায় এবং রক্তনালির চাপও বাড়িয়ে দিতে পারে।
গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, এমনকি সুস্থ, ফিট বা অল্প বয়স্কদের ক্ষেত্রেও ঠান্ডা জল রক্তনালির সংকোচন (রক্তনালিগুলোর চারপাশে পেশী শক্ত হওয়া) ঘটিয়ে হার্ট অ্যাটাককে ট্রিগার করতে পারে। এই ঘটনা সাধারণত গরম আবহাওয়ায় বেশি ঘটে, যখন মানুষ স্বস্তি পেতে অতিরিক্ত ঠান্ডা জল দিয়ে স্নান করেন।
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা:
‘ফিজিওলজি জার্নাল’-এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় এই বিষয়ে প্রথম ধারণা পাওয়া যায়। গবেষকরা ব্যাখ্যা করেন যে, অতিরিক্ত ঠান্ডা জলে স্নান করা বেশ বিপজ্জনক হতে পারে কারণ এটি ‘নিউরোজেনিক কার্ডিও-শ্বাসযন্ত্রের প্রতিক্রিয়া’ সৃষ্টি করতে পারে, যাকে ‘ঠান্ডা শক প্রতিক্রিয়া’ বলা হয়। এই শকের কারণে অস্থিরতা, দম বন্ধ হয়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট কিংবা আতঙ্কের সৃষ্টি হতে পারে। এর ফলে হৃৎপিণ্ডে অস্বাভাবিক ছন্দের সৃষ্টি হয় এবং হার্ট অ্যাটাক ঘটতে পারে।
স্নানে সতর্কতা:
বিশেষজ্ঞদের মতে, কখনোই হঠাৎ করে শরীরে ঠান্ডা জল ঢালবেন না। প্রথমে স্বাভাবিক তাপমাত্রার জল ঢালুন, তারপর ধীরে ধীরে ঠান্ডা জল ব্যবহার করতে পারেন। সেক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না। তবে হৃদরোগীদের উচিত ঠান্ডা জলে স্নান করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকা।
ঠান্ডা জলে স্নানের কিছু উপকারিতাও আছে:
যদিও ঝুঁকি রয়েছে, তবুও ঠান্ডা জলে স্নানের কিছু স্বাস্থ্যগত উপকারিতাও আছে। নেদারল্যান্ডসের ৩ হাজার অংশগ্রহণকারীর উপর করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন ঠান্ডা জলে স্নান করেন, তাদের অসুস্থতার কারণে কাজ থেকে কাজ থেকে ছুটি নেওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের তুলনায় ২৯ শতাংশ কম ছিল। অন্যান্য গবেষণায় জানা গেছে, ঠান্ডা জলে স্নান করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে এবং শরীরের প্রদাহও কমে। অনেক চিকিৎসকের মতে, ঠান্ডা জলের ঝরনা দীর্ঘায়ু বাড়ায় এবং বিপাকক্রিয়াও উন্নত করে।
অতএব, ঠান্ডা জলে স্নানের ক্ষেত্রে প্রত্যেকেরই সতর্ক থাকা উচিত, বিশেষত যাদের হৃদরোগের ঝুঁকি রয়েছে। স্বাস্থ্যগত সুবিধার পাশাপাশি ঝুঁকির দিকটিও বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।