টাকা কি সত্যিই সুখ কিনতে পারে? বিজ্ঞান কি বলছে শুনলে চমকে যাবেন!

টাকা দিয়ে সুখ কেনা যায় কি না, এই চিরন্তন প্রশ্ন আজও আমাদের ভাবিয়ে তোলে। যুগ যুগ ধরে এই বিষয়টি নিয়ে অজস্র বিতর্ক হয়েছে। যেহেতু মানুষ জীবনে আর্থিক সাফল্যের পেছনে ছোটে, তাই সুখের ধারণাকে প্রায়শই বস্তুগত সম্পদের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা হয়। ফলস্বরূপ, অর্থ এবং সুখের মধ্যেকার সম্পর্কটি জটিল হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু সত্যিই কি টাকা আমাদের জীবনকে পরিপূর্ণ এবং তৃপ্তিময় করে তোলে? আসুন, এই বিষয়ে সাম্প্রতিক গবেষণা কী বলছে, তা জেনে নেওয়া যাক।

১. টাকা কি সুখ কিনতে সক্ষম?

গবেষক ড্যানিয়েল কাহনেম্যান এবং ম্যাথিউ কিলিংসওয়ার্থের সাম্প্রতিক একটি যৌথ গবেষণা প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে যে একটি নির্দিষ্ট আয়ে পৌঁছানোর পরই মানুষ প্রকৃত সুখের সন্ধান পায়। একটি স্মার্টফোন অ্যাপ ব্যবহার করে এই গবেষক জুটি তেত্রিশ হাজারের বেশি অংশগ্রহণকারীর কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এই তথ্য অনুযায়ী, ক্রমবর্ধমান আয়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের সুখের অনুভূতিও বাড়তে থাকে। সমীক্ষায় এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া গেছে যে, কম উপার্জনকারী ব্যক্তিরা উচ্চ উপার্জনকারীদের তুলনায় বর্ধিত আয় থেকে বেশি সুখ অনুভব করেন।

২. গবেষণার ফলাফল:

গবেষণায় দেখা গেছে যে, যাদের আর্থিক সঙ্গতি বেশি, তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস এবং নিজেদের সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা বেশি থাকে। মানসিক সুস্থতাও আয়ের সঙ্গে বৃদ্ধি পায়, তবে তা মূলত বার্ষিক ৭৫ থেকে ৯০ হাজার ডলার বেতন পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে। এর বাইরে, উচ্চ বেতন সুখের সূচকে তেমন উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে না, যা অর্থ এবং সুস্থতার মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সীমারেখা স্পষ্ট করে। এই ফলাফল অবশ্য কিলিংসওয়ার্থের ২০২১ সালের নিজস্ব সমীক্ষার সঙ্গে কিছুটা দ্বিমত পোষণ করে। সেই সমীক্ষায় বলা হয়েছিল যে, বার্ষিক আয় ৫ লক্ষ ডলার পর্যন্ত সুখের সঙ্গে অর্থের একটি ইতিবাচক সম্পর্ক বিদ্যমান। তবে যাদের বেতন ১ লক্ষ ডলারের বেশি, তারা সম্পদ বৃদ্ধি সত্ত্বেও তেমন উল্লেখযোগ্য উন্নতি অনুভব করতে পারেন না।

৩. টাকা যথেষ্ট নয়:

হার্ভার্ড স্টাডি অফ অ্যাডাল্ট ডেভেলপমেন্ট অনুসারে, সুখ অর্জনের ক্ষেত্রে সম্পর্কের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি ভালো জীবনের জন্য সম্পর্ক অপরিহার্য বলে বিবেচিত হয়। সুখ প্রদানের ক্ষেত্রে এই ধরনের অভিজ্ঞতা বস্তুগত সম্পদের চেয়েও অনেক ঊর্ধ্বে স্থান পায়। অনেকেই তাদের সামাজিক সংযোগ এবং সুখ বাড়ানোর জন্য বস্তুগত সম্পদের পরিবর্তে ভ্রমণ, কনসার্ট এবং প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটানোর মতো অভিজ্ঞতাকে বেশি গুরুত্ব দেন।

৪. সহানুভূতিশীল হওয়ার শক্তি:

২০০৮ সালে এলিজাবেথ ডান এবং তার সহকর্মীদের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে এক ভিন্ন চিত্র। কানাডার ভ্যাঙ্কুভারের রাস্তায় হেঁটে যাওয়া কিছু ব্যক্তিকে একটি খাম দেওয়া হয়েছিল, যাতে ছিল ৫ বা ২০ ডলারের নোট। অংশগ্রহণকারীদের দুটি দলে ভাগ করা হয়: একটি দলকে সেই অর্থ নিজেদের জন্য ব্যয় করতে বলা হয়, এবং অন্য দলকে সেই অর্থ দিয়ে অন্য কারও জন্য উপহার কিনতে বা দাতব্য দান করতে বলা হয়। সমীক্ষার ফলাফল শেষ পর্যন্ত এটাই প্রমাণ করে যে, পরোপকারী কাজে অর্থ ব্যয় করা নিজের জন্য ব্যয় করার চেয়ে বেশি সুখের অনুভূতি এনে দেয়।

টিটোভা এবং শেলডনের গবেষণা নিজের জন্য সুখের অন্বেষণ বনাম অন্যের জন্য সুখের অন্বেষণের মধ্যে সম্পর্ক এবং আর্থিক স্বচ্ছলতার উপর এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেছে। গবেষণায় নিজের সুখের চেয়ে অন্যদের খুশি করার তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব তুলে ধরা হয়েছে। সহানুভূতিশীল কাজ, যেমন অভাবী কাউকে সাহায্য করা ব্যক্তিগত সুখকে বহুলাংশে বৃদ্ধি করে।

৫. সুখ হলো মানসিক অবস্থা:

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তাটি হলো, শুধুমাত্র প্রচুর উপার্জনই সুখের নিশ্চয়তা দিতে পারে না। বিখ্যাত আমেরিকান খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারক বিলি গ্রাহাম একবার বলেছিলেন, ‘যখন সম্পদ হারিয়ে যায়, তখন কিছুই হারায় না; যখন স্বাস্থ্য হারিয়ে যায়, তখন সামান্য কিছু হারায়; যখন চরিত্র হারিয়ে যায়, তখন সব হারিয়ে যায়’। অতএব, আর্থিক সাফল্যের পাশাপাশি চরিত্র এবং মূল্যবোধও একটি সুখী জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সুতরাং, টাকা হয়তো কিছু সুবিধা কিনতে পারে, কিন্তু প্রকৃত সুখ আমাদের মানসিক অবস্থা, সম্পর্ক এবং অন্যের প্রতি আমাদের সহানুভূতির উপরই নির্ভরশীল।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy