কান্না আসুক বা না আসুক, চোখের জল কিন্তু সবসময় তৈরি হতে থাকে। চোখ বন্ধ করলেই যেন জলে ভরে ওঠে পাতা। আসলে, চোখের জল তৈরি হওয়া একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এটি না হলে চোখ শুকিয়ে যাবে! তবে জানেন কি, এই অশ্রু কত প্রকার ও কী কী কারণে তৈরি হয়? আর কেনই বা এর স্বাদ নোনতা লাগে?
আমাদের চোখে মূলত তিন ধরনের অশ্রু তৈরি হয় – বেসাল, ইরিট্যান্ট এবং ইমোশনাল।
বেসাল অশ্রু: চোখে স্বাভাবিক অবস্থায় যে জল তৈরি হয়, তাকে বেসাল অশ্রু বলে। এই অশ্রু আমাদের চোখকে সবসময় ভেজা রাখে এবং শুকিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। এটি চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ইরিট্যান্ট অশ্রু: হঠাৎ করে চোখে কোনো অস্বস্তির কারণ ঘটলে এই অশ্রু তৈরি হয়। যেমন, চোখে ধুলোবালি ঢুকলে কিংবা পেঁয়াজ কাটার সময় ঝাঁঝ লাগলে চোখ জ্বালা করে এবং জল বের হয়। এটি আসলে চোখ থেকে অস্বস্তিকর পদার্থগুলিকে ধুয়ে বের করে দেওয়ার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
ইমোশনাল অশ্রু: মন খারাপ হলে, রাগ হলে কিংবা কোনো গভীর আবেগের মুহূর্তে যে জল আমাদের চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে, সেটাই হল ইমোশনাল অশ্রু। এই সময়ে চোখের জলের পরিমাণ অন্য সময়ের চেয়ে বেশি থাকে।
আমরা সকলেই কমবেশি চোখের জলের নোনতা স্বাদ অনুভব করেছি। কিন্তু এই অশ্রু কেন নোনতা হয়, তা কি জানেন?
আমাদের চোখের জল তৈরি হয় ল্যাকরিমাল গ্রন্থি থেকে। এই জলের সঙ্গে মিশ্রিত থাকে ফ্যাটি অয়েল (তেল) এবং ম্যুকাস (слизь)। এছাড়াও, প্রায় দেড় হাজার রকমের প্রোটিনও থাকে এই অশ্রুতে। ম্যুকাস আমাদের চোখকে শুকিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে, আর তেলের উপস্থিতি অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণে। চোখের জল যাতে সহজে বাষ্পীভূত না হয়ে যায়, সেই দায়িত্ব পালন করে এই তেল।
তবে ‘ইমোশনাল’ চোখের জলে এই সব উপাদানের সঙ্গে আরও একটি বিশেষ পদার্থ থাকে – তা হল স্ট্রেস হরমোন (stress hormone)। এই স্ট্রেস হরমোন এবং অন্যান্য উপাদান মিলিত হয়েই আমাদের চোখের জলের সেই পরিচিত নোনতা স্বাদ তৈরি করে।
সুতরাং, কান্না না এলেও চোখের জল তৈরি হওয়া একটি অত্যাবশ্যকীয় প্রক্রিয়া, যা আমাদের চোখের স্বাস্থ্য রক্ষা করে। আর সেই অশ্রুর নোনতা স্বাদ আসলে বিভিন্ন জৈব উপাদানের এক জটিল মিশ্রণ।