ঘুম থেকে ওঠার পর চোখের নিচে ফোলাভাব? বা দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটার ব্যবহারের পর চোখ ক্লান্ত ও ফুলে উঠছে? এই সমস্যাকে আমরা সচরাচর ‘পাফি আইস’ বলে থাকি। অনেকেই একে সাধারণ ক্লান্তি বলে উড়িয়ে দেন, কিন্তু এর পেছনে থাকতে পারে আরও গভীর কিছু কারণ। শুধু রাত জাগা বা স্ক্রিন টাইমই নয়, জীবনযাত্রার ভুলভ্রান্তি থেকে শুরু করে কিছু শারীরিক অসুস্থতাও এই সমস্যার জন্ম দিতে পারে।
কেন ফুলে ওঠে চোখের পাতা?
আমাদের চোখের পাতার টিস্যু এবং পেশী যখন দুর্বল হয়ে যায়, তখনই চোখের নিচে ফোলাভাব দেখা দেয়। অনেক সময় ত্বকও ঝুলে পড়ে। সাধারণত, চোখের চারপাশে থাকা চর্বি নিচের অংশে চলে যাওয়ার কারণে এমনটি ঘটে। এর ফলে চোখের নিচে তরল জমা হয়, যা ওই স্থানকে ফোলা দেখায়। বেশ কয়েকটি কারণে এই ফোলাভাবের সৃষ্টি হতে পারে:
বার্ধক্য: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা কমে আসে।
ঘুম থেকে ওঠার পরে: রাতে শোয়ার সময় তরল জমে যাওয়ায় সকালে ফোলা লাগতে পারে।
লবণাক্ত খাবারের পরে: অতিরিক্ত লবণ শরীরে জল ধরে রাখে, যা চোখে ফোলাভাব সৃষ্টি করে।
ঘুমের অভাব: পর্যাপ্ত ঘুম না হলে চোখের চারপাশের রক্তনালীগুলো প্রসারিত হয়।
অ্যালার্জি: অ্যালার্জির কারণে চোখে চুলকানি বা প্রদাহ হতে পারে, যার ফলে ফোলাভাব দেখা দেয়।
ধূমপান: ধূমপান ত্বকের ক্ষতি করে এবং বার্ধক্যের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।
জেনেটিক্স: বংশগত কারণেও কারো কারো চোখের নিচে ফোলাভাব দেখা যেতে পারে।
নির্দিষ্ট কিছু রোগ: ডার্মাটাইটিস, ডার্মাটোমায়োসাইটিস, রেনাল ডিজিজ (কিডনির সমস্যা) এবং থাইরয়েড সংক্রান্ত চোখের রোগের চিকিৎসাকালীন সময়েও চোখের তলায় ফোলাভাব দেখা দিতে পারে।
ফোলাভাব দূর করার সহজ উপায়
চিন্তা নেই! এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কিছু সহজ ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন:
ঠান্ডা সেঁক: চোখের চারপাশে ঠান্ডা কিছু দিয়ে আলতো করে সেঁক দিন। বরফের টুকরো একটি পরিষ্কার কাপড়ে মুড়ে বা ঠান্ডা জলে তুলো ভিজিয়ে চোখের ওপর মিনিট দশেক রাখুন। এটি রক্তনালী সংকুচিত করে ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করবে।
টি ব্যাগের ব্যবহার: ব্যবহার করা টি ব্যাগ (বিশেষ করে গ্রিন টি বা ক্যামোমাইল টি) ঠান্ডা করে চোখের ওপর রাখতে পারেন। চায়ের মধ্যে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ট্যানিন রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে। খেয়াল রাখবেন, চোখের ভেতর যেন কিছু না ঢোকে। চোখ বন্ধ করে রাখলে ভালো হবে।
শসার ব্যবহার: চোখের নিচে ফোলাভাব এবং ডার্ক সার্কেল কমাতে শসা অত্যন্ত কার্যকর। গোল করে কাটা শসার টুকরো চোখের ওপর ১০ মিনিট রেখে দিন। নিয়মিত ব্যবহারে ফোলাভাব ও ডার্ক সার্কেল কমে আসবে। চাইলে শসার রস তুলোর সাহায্যে ব্যবহার করতে পারেন।
পর্যাপ্ত জল পান: শরীরকে আর্দ্র রাখা খুব জরুরি। শরীরে জলের ঘাটতি হলেও চোখের চারপাশের ফোলাভাব দেখা দিতে পারে। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করুন। এটি শরীর থেকে টক্সিন বের করতেও সাহায্য করে।
পর্যাপ্ত ঘুম: প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা গভীর ঘুম অত্যন্ত জরুরি। পর্যাপ্ত ঘুম চোখের চারপাশের ফোলাভাব এবং ডার্ক সার্কেলের সমস্যা দূর করতে ম্যাজিকের মতো কাজ করে।
চোখের নিচের ফোলাভাব শুধু সৌন্দর্যের সমস্যা নয়, এটি আপনার জীবনযাপন বা স্বাস্থ্যের একটি ইঙ্গিতও হতে পারে। তাই এই সহজ টিপসগুলো মেনে চলুন এবং সুস্থ থাকুন!