সকালের উষ্ণ কাপে চুমুক দেওয়া থেকে শুরু করে সারাদিনের ক্লান্তি দূর করা—চা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। কেউ দিনে একবার পান করেন, আবার কারও ক্ষেত্রে আট-দশ কাপ চা পান না করলে দিনই চলে না। দুধ চা হোক বা আদা মেশানো কড়া লাল চা, এর প্রতি আসক্তি কম-বেশি প্রায় সবারই রয়েছে। কিন্তু এই আপাত নিরীহ অভ্যাসই যে মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে, তা কি আমরা জানি? মাত্রাতিরিক্ত চা পান বাড়িয়ে দিতে পারে কোষ্ঠকাঠিন্য, হৃদরোগ এমনকি প্রস্টেট ক্যান্সার বা মূত্রথলির ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগের ঝুঁকি।
চলুন, জেনে নেওয়া যাক, মাত্রাতিরিক্ত চা পানের অভ্যাস কোন কোন মারাত্মক রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে:
১. মানসিক অস্থিরতা ও উদ্বেগ:
চায়ের মধ্যে থাকা ক্যাফেইন একদিকে যেমন উদ্দীপনা বাড়াতে সাহায্য করে, তেমনই অতিরিক্ত চা পান করলে তা উৎকণ্ঠা, উদ্বেগ এবং শারীরিক অস্থিরতা বহুগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। যারা এমনিতেই দুশ্চিন্তায় ভোগেন, তাদের জন্য এটি পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলতে পারে।
২. ঘুমের ব্যাঘাত ও অনিদ্রা:
অতিরিক্ত মাত্রায় চা পান করলে চায়ে থাকা ক্যাফেইনের প্রভাবে ঘুমের মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটতে পারে। ঘুমানোর ঠিক আগে চা পান করলে তা মস্তিষ্কে উদ্দীপনা তৈরি করে এবং অনিদ্রার সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যাহত হয়।
৩. হজমের সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্য:
চায়ের মধ্যে থাকা থিওফাইলিন নামক রাসায়নিক পরিপাকের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বাধার সৃষ্টি করে। তাই অতিরিক্ত মাত্রায় চা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। এর ফলে পেট ফাঁপা, অস্বস্তি এবং দীর্ঘমেয়াদী হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৪. গর্ভবতী মহিলাদের ঝুঁকি:
বিশেষজ্ঞদের মতে, গর্ভবতী নারীদের চা-কফি সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলাই ভালো। কারণ, এর মধ্যে থাকা ক্যাফেইন গর্ভস্থ ভ্রূণের ক্ষতি করতে পারে, যা অবাঞ্ছিত গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। হবু মায়েদের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সতর্কতা।
৫. হৃদযন্ত্রের উপর প্রভাব:
যাদের হৃদরোগের সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য চা পানের মাত্রা সীমিত রাখা অত্যন্ত জরুরি। অতিরিক্ত ক্যাফেইন হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দিতে পারে এবং রক্তচাপের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যা হৃদরোগীদের জন্য বিপজ্জনক।
৬. পুরুষদের ক্যান্সারের ঝুঁকি:
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত মাত্রায় চা পান করলে পুরুষদের প্রস্টেট ক্যান্সার বা মূত্রথলির ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়। যদিও এই বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে, তবে প্রাথমিক ফলাফলগুলো যথেষ্ট উদ্বেগের।
সুতরাং, আপনার দৈনিক চা পানের অভ্যাস যদি মাত্রাতিরিক্ত হয়, তবে এখন থেকেই সতর্ক হন। স্বাদের আনন্দ উপভোগ করুন, কিন্তু শরীরের সুস্থতাকে প্রাধান্য দিন। মনে রাখবেন, পরিমিতিই সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি।