বর্তমানে ডায়াবেটিস একটি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সমস্যা, যা প্রতিটি ঘরে ঘরেই তার বিস্তার ঘটাচ্ছে। ছোট থেকে বুড়ো, সব বয়সের মানুষের শরীরেই বাসা বাঁধছে এই দীর্ঘস্থায়ী ব্যাধি। একবার ডায়াবেটিস ধরা পড়লে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা বেশ কষ্টকর হয়ে পড়ে। বিশেষজ্ঞদের তথ্য অনুযায়ী, ২০৪৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা দেড় কোটিতে দাঁড়াতে পারে। তাই ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি।
প্রি-ডায়াবেটিস: সতর্ক হওয়ার সময়
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডায়াবেটিস হওয়ার আগেই শরীরে প্রি-ডায়াবেটিসের বেশ কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। প্রাথমিক অবস্থায় ডায়াবেটিস ধরা পড়লে তা সহজেই প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই কিছু লক্ষণ সম্পর্কে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে:
ঘনঘন প্রস্রাব হওয়া ও পিপাসা লাগা: স্বাভাবিকের চেয়ে বেশিবার প্রস্রাব হওয়া এবং তৃষ্ণার্ত অনুভব করা প্রি-ডায়াবেটিসের একটি সাধারণ লক্ষণ।
দুর্বল বোধ ও মাথা ঘোরা: প্রায়শই ক্লান্তি এবং দুর্বলতা অনুভব করা বা হঠাৎ মাথা ঘোরা ডায়াবেটিসের পূর্ব লক্ষণ হতে পারে।
ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া: স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ক্ষুধা অনুভব করা এবং বারবার খাওয়ার প্রবণতা দেখা দেওয়া।
খাওয়া-দাওয়ায় অনিয়ম হলে রক্তের শর্করা কমে হাইপো হওয়া: খাবারের সময়সূচিতে অনিয়ম হলে রক্তের শর্করা অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়া (হাইপোগ্লাইসেমিয়া) একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা।
মিষ্টি খাবারের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যাওয়া: মিষ্টি বা চিনিযুক্ত খাবারের প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা বেড়ে যাওয়া।
ওজন কমে যাওয়া: কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া।
শরীরে ক্ষত বা কাটাছেঁড়া সহজে না সারা: ছোটখাটো আঘাত বা ক্ষত সহজে না শুকানো ডায়াবেটিসের একটি পরিচিত লক্ষণ।
চামড়ায় শুষ্ক, খসখসে ও চুলকানি ভাব: ত্বকে শুষ্কতা, খসখসে ভাব এবং ঘনঘন চুলকানি অনুভব করা।
চোখে কম দেখতে শুরু করা: দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে আসা বা কমে যাওয়া।
করণীয় ও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, উপরে উল্লেখিত লক্ষণগুলো দেখলে দ্রুত ডায়াবেটিস পরীক্ষা করানো উচিত। এর জন্য সবসময় হাসপাতালে যেতে হবে এমন নয়। বর্তমানে অনেক ফার্মেসিতেই স্বল্পমূল্যে দ্রুত ডায়াবেটিস পরীক্ষা করার সুবিধা রয়েছে। যদি সেখানে ডায়াবেটিস শনাক্ত হয়, তবে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় এবং উপযুক্ত চিকিৎসা ও জীবনযাত্রার পরিবর্তনে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে এটি প্রতিরোধও করা যায়। সচেতনতাই ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রথম ধাপ।