গর্ভবতী মায়েদের ঘুমের সঠিক নিয়ম! চিৎ হয়ে শোয়া ডেকে আনতে পারে মারাত্মক বিপদ

গর্ভবতী মহিলাদের জন্য পর্যাপ্ত ঘুম অত্যন্ত জরুরি। তবে ঘুমের ভঙ্গিও গর্ভস্থ সন্তানের স্বাস্থ্যের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী, গর্ভবতী মা চিৎ হয়ে ঘুমালে মৃতশিশু প্রসবের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। শুধু তাই নয়, ডান পাশে কাত হয়ে ঘুমাতেও নিষেধ করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, গর্ভবতী মায়ের ঘুমানোর সবচেয়ে সঠিক নিয়ম হলো বাম পাশে কাত হয়ে শোয়া।

জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের ওষুধ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. গ্রেস পিয়েন এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘গর্ভবতী নারী যদি পিঠে ভর দিয়ে বা চিৎ হয়ে ঘুমায়, তাহলে ইনফেরিয়র ভিনা কাভা (Inferior Vena Cava – IVC)-তে ভ্রূণের চাপ পড়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। ইনফেরিয়র ভিনা কাভা মায়ের শরীরের একটি বড় শিরা, যা মেরুদণ্ডের ডানপাশ বরাবর বিস্তৃত এবং এটি শরীরের নিচের অংশ থেকে হৃদপিণ্ডে পুনরায় রক্ত বহন করতে সহায়ক। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, ডান পাশে কাত হয়ে ঘুমানোর চেয়ে বাম পাশে কাত হয়ে ঘুমালে এই শিরার উপর চাপ পড়ার সম্ভাবনা অনেক কম থাকে।’

নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী এ বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা পরিচালনা করেছেন। তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভবতী মা চিৎ হয়ে শুয়ে থাকলে গর্ভস্থ শিশুর হৃৎস্পন্দন এবং নড়াচড়া উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। এর অর্থ হলো, গর্ভস্থ শিশুটি অক্সিজেন স্বল্পতায় ভুগতে পারে। এছাড়াও, মা চিৎ হয়ে শুয়ে থাকলে গর্ভস্থ শিশুর শরীরে রক্তপ্রবাহও কমে যায়। এই কারণে গর্ভস্থ শিশুর মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।

তবে এক্ষেত্রে একটি বিষয় উল্লেখ্য, যদি কোনো গর্ভবতী মা সম্পূর্ণ সুস্থ থাকেন এবং কোনো কারণে বাম পাশে কাত হয়ে ঘুমাতে অসুবিধা বোধ করেন, তাহলে তিনি ডান পাশে কাত হয়েও ঘুমাতে পারেন। তবে বাম পাশেই শোয়া সবচেয়ে নিরাপদ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

পরিশেষে বলা যায়, গর্ভবতী মহিলাদের তাদের ঘুমের ভঙ্গির ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্ক থাকা উচিত। বাম পাশে কাত হয়ে শোয়া একদিকে যেমন মায়ের শরীরের রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে, তেমনই গর্ভস্থ শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই সুস্থ ও নিরাপদ গর্ভাবস্থার জন্য ঘুমের সঠিক নিয়ম মেনে চলা অপরিহার্য।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy