সোনা শব্দটি শুনলেই আমাদের চোখে গয়না ও সাজসজ্জার ঝলকানি ভেসে ওঠে। কিন্তু আজকাল বিশ্বের অনেক বিলাসবহুল রেস্তোরাঁয় বার্গার, আইসক্রিম, চকলেট, কফি, মিষ্টি বা স্টেকও পরিবেশন করা হচ্ছে সোনার প্রলেপ দিয়ে। এই ধরনের খাবারের দাম প্রায় লাখ টাকার কাছাকাছি পৌঁছয়। প্রশ্ন হল, এত দাম দিয়ে কেনা এই সোনা কি সত্যিই খাওয়ার যোগ্য?
বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের মতে, উত্তরটি হলো— খাদ্য হিসেবে সোনা শরীরের জন্য কোনো দরকারি পুষ্টিগুণ যোগ করে না।
রাসায়নিকভাবে সোনা নিষ্ক্রিয় বা ‘ইনার্ট’। তাই এটি হজম হয় না এবং শরীর থেকে বর্জ্যের সঙ্গে বের হয়ে যায়। একসময় মনে করা হতো, সোনা ত্বকের জন্য উপকারী বা কোলাজেন উৎপাদনে সহায়ক। কিন্তু আধুনিক গবেষণায় এর কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। খাবারে সোনা মেশালে অ্যালার্জি বা ফাঙ্গাল সংক্রমণ কমার বিষয়েও কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
তবে খাবারে ব্যবহৃত সোনা অবশ্যই নিখাদ ২৪ ক্যারেটের হতে হবে। এটি ই১৭৫ (E175) আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রে খাবারে ব্যবহার করার জন্য অনুমোদিত।
কখন থেকে শুরু হলো সোনা খাওয়ার চল?
খাবারে সোনা খাওয়ার ইতিহাস অত্যন্ত প্রাচীন। প্রায় ৫ হাজার বছর আগে মিশরে মানুষ খাবারে সোনা ব্যবহার করত এবং এটিকে ঐশ্বরিক ক্ষমতা বা অমরত্বের প্রতীক হিসেবে দেখত। ভারতেও চমনপ্রাশ ও কিছু ঐতিহ্যবাহী ওষুধে সোনা ব্যবহার হতো, যা আধ্যাত্মিক বিশ্বাস অনুযায়ী বুদ্ধি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল।
তবে আধুনিক সময়ে খাবারে ব্যবহৃত সোনা মূলত সাজসজ্জা, আভিজাত্য বা সামাজিক মর্যাদা প্রদর্শনের মাধ্যম হিসেবেই ব্যবহার করা হয়। যুক্তরাজ্যের ‘কনিসিউর গোল্ড’-এর মতো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিশ্বে এই ধরনের খাবারযোগ্য সোনা তৈরি করে।
নিয়ন্ত্রণ ও সতর্কতা
উন্নত দেশ, যেমন যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে খাবারযোগ্য সোনার নিরাপদ পরিমাণ ও মান নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নিয়মাবলি আছে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো এ ধরনের কোনো নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান নেই। তাই বিদেশি উৎস থেকে আসা সোনাযুক্ত খাবারে ভোক্তাদের সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।