কুমারীত্ব নিয়ে আমাদের সমাজে কথা বলা এখনও এক ধরনের ট্যাবু হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চিন্তাভাবনা দ্রুত বদলাচ্ছে। অনেকেই এখন নিজেদের পছন্দ-অপছন্দ এবং বিভিন্ন সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে শুরু করেছেন। কুমারীত্ব হারানো এমনই একটি ব্যক্তিগত এবং সংবেদনশীল বিষয়, যা নিয়ে ভারতে এখনও অনেক প্রশ্ন এবং ভুল ধারণা রয়েছে। কুমারীত্ব হারালে অহেতুক আতঙ্কে না ভুগে, বরং সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি। প্রথম যৌন মিলনের পর নারীর দেহে কী কী পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়, এই প্রতিবেদনে সেই বিষয়গুলি তুলে ধরার চেষ্টা করা হলো, যা ট্যাবু ভেঙে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে সাহায্য করবে।
১. যোনিতে পরিবর্তন:
প্রথম যৌন মিলনের পর নারীর দেহে বেশ কিছু শারীরিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়, যার মধ্যে অন্যতম হলো যোনির পরিবর্তন। যোনিপথের স্থিতিস্থাপকতা (vagina’s elasticity) বা ইলাস্টিসিটিতে পরিবর্তন টের পাওয়া যায়। নিয়মিত যৌন মিলনের ফলে নারীর গোপনাঙ্গ ক্রমশ মিলনের জন্য আরও উন্মুক্ত এবং অভিযোজিত হতে শুরু করে। একটা সময় পর যোনি নিজেই প্রয়োজন অনুযায়ী লিউব্রিকেটেড (lubricated) বা পিচ্ছিল হতে শুরু করে।
২. ক্লিটোরাস ও জরায়ুর প্রতিক্রিয়া:
যৌন উত্তেজনা জাগলে ক্লিটোরাস সাড়া দিতে শুরু করে এবং জরায়ু (Uterus) কখন সংকুচিত ও প্রসারিত হতে হবে তা বুঝতে শেখে। নিয়মিত যৌন মিলন শুরু হলেই এই পরিবর্তনগুলি স্পষ্টভাবে টের পাওয়া যায়। অন্যথা, নারীর গোপনাঙ্গ ‘ইন-অ্যাকটিভ’ বা নিষ্ক্রিয়ই থেকে যায়।
৩. স্তনে পরিবর্তন:
কুমারীত্ব হারানোর পর যখন নারীর শরীর নিয়মিত মিলনের আস্বাদ পেতে শুরু করে, তখন শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলিতেও কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। যেমন, মিলনের সময় ও তার কিছুক্ষণ পর স্তন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি দৃঢ় বা শক্ত হতে শুরু করে। এর কারণ হলো, এই সময় কোষগুলিতে রক্ত সঞ্চালন অনেক বেড়ে যায়। একই কারণে স্তনবৃন্তগুলিও দৃঢ় হয় এবং আরও সংবেদনশীল হয়ে ওঠে।
৪. ‘হ্যাপি’ হরমোনের বৃদ্ধি ও ত্বকের উজ্জ্বলতা:
যৌন মিলনের ফলে শরীরে ‘হ্যাপি’ হরমোন নামে পরিচিত ‘সেরোটোনিন’-এর মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এই হরমোন মানসিক শান্তি এবং আনন্দের অনুভূতি সৃষ্টি করে। এর প্রভাবে ত্বক উজ্জ্বল হয় এবং মহিলারা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি হাসিখুশি ও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠেন।
৫. ঋতুচক্রে সাময়িক পরিবর্তন:
হরমোনের পরিবর্তনের ফলে অনেক সময় মহিলাদের ঋতুচক্রে খানিকটা দেরি হতে পারে। পিরিয়ড একটু দেরিতে হওয়ায় অনেকে এই সময় প্রেগনেন্সির আশঙ্কায় ভোগেন। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, প্রথম যৌন মিলনের কারণে পিরিয়ড দেরিতে হওয়াটা অমূলক নয় এবং এতে আশঙ্কার কিছু নেই, যদি না অন্য কোনো অস্বাভাবিকতা থাকে।
৬. আবেগপ্রবণতা বৃদ্ধি:
ভার্জিনিটি হারানোর পর মহিলারা কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তাঁদের সুখ বা দুঃখের বহিঃপ্রকাশ স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা চড়া হতে পারে। এটিও হরমোনাল পরিবর্তনের একটি অংশ।
এই পরিবর্তনগুলো নারীর শরীরের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া এবং এ নিয়ে কোনো রকম আতঙ্ক বা ভয়ের কারণ নেই। বরং এসব তথ্য জেনে সচেতন থাকা এবং যেকোনো ব্যক্তিগত প্রশ্ন বা উদ্বেগের জন্য নির্ভরযোগ্য উৎস বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অপরিহার্য।