দাঁত ভালো রাখতে নিয়মিত ব্রাশ করা প্রয়োজন। সকালে ঘুম থেকে উঠে ও রাতে খাবারের পর ঘুমাতে যাওয়ার আগে দাঁত ব্রাশ করতে হবে। দাঁত ভালোভাবে ব্রাশ না করলে দাঁতের ফাঁকে জীবাণু আটকে থাকে।
তাছাড়া দাঁতের সমস্যা শিশুদের জন্য আমাদের দেশে একটি অন্যতম সমস্যা। শিশু অবস্থা থেকেই যদি দাঁতের সঠিক যত্ন নেয়া না যায় সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে বাচ্চাদের দাঁতের বিভিন্নরকম রোগে ভুগতে হয়। সেই প্রেক্ষিতে শিশু অবস্থা থেকেই পিতা মাতাকে বাচ্চার প্রতি অনেক যত্নশীল হতে হয়। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক বাচ্চাকে সঠিক নিয়মে দাঁত ব্রাশ করা শেখানোর কিছু টিপস-
বাচ্চাদের দাঁত মাজায় লক্ষণীয় বিষয়
বাচ্চাদের দাঁত মাজা শেখানোর ক্ষেত্রে বাবা-মাকে যে সব ব্যাপার খুব গুরুত্বপূর্ণ ভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে সেগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
>>> আনুমানিক ৪৫ ডিগ্রি কোণে ব্রাশটাকে সমান্তরালে রাখতে হবে যাতে ব্রাশের অর্ধেকটা মাড়িতে আর অর্ধেকটা দাঁতে থাকে।
>>> প্রথমে উপরের পাটির বাইরের দিকটা হালকা ভাবে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ডান দিকে এবং বাম দিকে পেছনের দাঁত মাজুন।
>>> নিচের পাটির দাঁতের বাইরের দিকটা একইভাবে মাজতে শেখান।
>>> ব্রাশটাকে আড়াআড়ি ভাবে উপরের পাটি বা নিচের পাটির দাঁতের ভেতরে মাজার চেষ্টা করাতে হবে।
>>> উপরের এবং নিচের দাঁতের ধারালো অংশে ব্রাশ ঘষে ঘষে পরিষ্কার করা শেখাতে হবে।
>>> দাঁত মাজা হয়ে গেলে ব্রাশ দিয়ে আলতো ভাবে জিভ পরিষ্কার করা শেখাতে হবে। অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যাতে মাড়ি বা দাঁতের গোঁড়ায় বেশি চাপ না পড়ে।
কীভাবে বাচ্চাকে দাঁত মাজা শেখাতে হবে
সাধারনত ছয় মাস বয়সে বাচ্চাদের দাঁত উঠা শুরু হয়। দুই-আড়াই বছরের মধ্যে দুধের দাঁত অনেকগুলোই উঠে যায়। ছয় বছরের মধ্যে দুধের দাঁত পড়ে গিয়ে নতুন দাঁত উঠতে শুরু করে। এই পর্যায়ে শিশুদের দাঁতের উপযুক্ত পরিচর্যা নেয়া উচিৎ। বাচ্চাদের ব্রাশ করা শেখাতে প্রাথমিক ভাবে যে সব দিকগুলো বাবা-মাকে লক্ষ্য রাখতে হবে সেগুলো হলো-
বাচ্চাদের প্রথমে খেলার ছলে দাঁত মাজানো শেখাতে হবে। নতুন কোনো জিনিস বাচ্চারা সহজে মানিয়ে নিতে না পেরে কান্নাকাটি ও করতে পারে। এ ধরনের সমস্যায় বাচ্চাদের কখনো জোর করা উচিৎ নয়। বরং ধীরে ধীরে খেলার ছলে নিজেদের সঙ্গে বাচ্চকে দাঁত মাজা শেখাতে হবে।
>>> দাঁত ওঠার সময় বাচ্চারা অধিক সমস্যায় পড়ে থাকে। জ্বরের সঙ্গে দাঁতের মাড়ি ব্যথা করতে পারে। এই সময় ঠাণ্ডা জলে তুলা ভিজিয়ে মুখের বাইরে এবং মাড়িতে হালকা ভাবে বুলাতে হবে।
>>> দাঁত ওঠার সময়টাতে ঠাণ্ডা দই এবং ম্যাস করা ফল খেতে দেয়া যেতে পারে।
>>> দাঁত ভালো করে ওঠার আগে এক টুকরো গজের কাপড় আঙুলে জড়িয়ে মাড়ি পরিষ্কার করতে হবে।
>>> বাচ্চার বয়স পাঁচ বছর না হওয়া পর্যন্ত বড়দের টুথপেস্ট ব্যবহার করা যাবে না। কারণ এতে ফ্লুরাইড থাকে যা বাচ্চার দুধ দাঁতের জন্য ক্ষতিকর। তাই বাচ্চার দুধদাঁত পড়া শুরু হবার আগ পর্যন্ত ওকে ফ্লুরাইডবিহীন বেবি জেল টুথপেস্ট দেবেন।
>>> বাচ্চাদের বাবা-মা নিজেদের সঙ্গে ব্রাশ করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। যেহেতু বাচ্চারা খুব অনুকরনপ্রিয়, বাবা-মা থেকেই বাচ্চারা প্রথম শিখবে।
বাচ্চাদের দাঁত মাজার অভ্যাস গড়ে তোলার উপায়
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চাদের দাঁত মাজার অভ্যাস গড়ে তুলতে হয়। শিশু অবস্থায় বাচ্চাদের উৎকৃষ্ট সময় দাঁত মাজা শেখানোর অভ্যাস গড়ে তোলা। দাঁত ব্রাশে বাচ্চাদের অভ্যস্ত করে তোলার প্রাথমিক উপায়-
>>> দিনে দুইবার দাঁত মাজার সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চাদের কোনো কিছু খাওয়ার পর মুখ ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
>>> বাচ্চার সঙ্গে বাবা মার ও দাঁত ব্রাশ করতে হবে যাতে বাচ্চারা অনেক বেশি দাঁত ব্রাশ করতে উৎসাহী হবে।
>>> একটি নির্দিষ্ট সময় পর থেকেই বাচ্চাকে নিজে ব্রাশ করতে দিন। অবশ্য টুথপেস্ট যাতে গিলে না ফেলে সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
>>> চকলেট, মিষ্টি, স্নেক্স, ফাস্টফুড এসবের প্রতি বাচ্চারা অনেক বেশি আকর্ষিত হয়ে থাকে। বাবা মাকে অবশ্যই এসব খাবারের প্রতি নজরদারি হতে হবে যাতে ফাস্টফুডে বাচ্চা অভ্যস্ত হয়ে না পড়ে। এসব খাবার দাঁতের জন্য খুব বিপদজনক। তাই এসব খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুখ ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
>>> বাচ্চারা যেন রাতে খাওয়ার পর পরই ঘুমিয় না পড়ে সেই দিকে বাবা-মাকে অনেক বেশি সজাগ থাকতে হবে। ছোটবেলা থেকেই বাচ্চাদের দাঁত ব্রাশ করে ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।