কেউ কাঁদলে আমরা সাধারণত তাকে সান্ত্বনা দিতেই ছুটে যাই। কিন্তু যদি বলা হয়, কাঁদতে বারণ না করে বরং তাকে আরও কিছুক্ষণ কাঁদতে দিন, কারণ তা শরীরের জন্য ভালো? কথাটা শুনতে অদ্ভুত লাগলেও, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা কিন্তু ঠিক এই কথাই বলছেন। তাদের মতে, মাঝেমধ্যে কান্নাকাটি করা শরীর ও মনের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
সপ্তাহে একবার কান্না: মানসিক চাপ মুক্তির সহজ দাওয়াই
সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী, সপ্তাহে অন্তত একবার কাঁদা শরীরের পক্ষে মঙ্গলজনক। জাপানের একটি সংস্থা পরিচালিত সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে, কাঁদার মাধ্যমে আসলে মানসিক চাপ বা স্ট্রেস কমে। জাপানে তো এমন একজন শিক্ষিকারও খোঁজ মিলেছে যার পরিচিতিই দাঁড়িয়ে গেছে ‘টিয়ার্স টিচার’ বা ‘কান্নার শিক্ষিকা’ হিসেবে! জানা গেছে, তিনি গত ৭-৮ বছর ধরে নিয়মিত ওয়ার্কশপ পরিচালনা করছেন, যেখানে কান্নাকাটির ইতিবাচক দিক সম্পর্কে উপস্থিত ব্যক্তিদের অবগত করা হয়।
চোখের সুস্থতা থেকে মানসিক শান্তি: কান্নার বহুমুখী উপকারিতা
বিজ্ঞানীরা বলছেন, অশ্রু কেবল আবেগের বহিঃপ্রকাশ নয়, এর রয়েছে সুদূরপ্রসারী শারীরিক উপকারিতাও:
চোখের স্বাস্থ্য: কাঁদলে চোখ শুকিয়ে যাওয়ার মতো সমস্যার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়। চোখের জল চোখের আর্দ্রতা বজায় রাখে।
জীবাণুনাশক: চোখের জলে ‘লিসোজাইম’ (Lysozyme) নামের একটি উপাদান থাকে, যা অধিকাংশ ক্ষতিকারক জীবাণুকে মেরে ফেলতে সক্ষম। এর ফলে চোখ জীবাণুর সংক্রমণ থেকে রক্ষা পায়।
পরিষ্কারক: ধুলো, ধোঁয়া বা পরিবেশের অন্যান্য দূষণ থেকে চোখে যে নোংরা জমে, চোখের জল প্রাকৃতিকভাবে তা পরিষ্কার করে দেয়, যা চোখকে সতেজ ও সুস্থ রাখে।
অন্যদিকে, মনোবৈজ্ঞানিকেরা একবাক্যে স্বীকার করেছেন যে, কান্নার পর মানুষ মানসিকভাবে অনেক হালকা হয়ে যান। চাপা আবেগ, হতাশা এবং দুঃখ প্রকাশের একটি স্বাস্থ্যকর মাধ্যম হলো কান্না, যা মানসিক বোঝা কমিয়ে মনকে শান্ত করে তোলে।
সুতরাং, এবার থেকে মন খারাপ হলে বা চাপ অনুভব করলে চোখের জল ধরে না রেখে একটু মন খুলে কাঁদুন। কারণ, এই কান্না আপনার শরীর ও মনের জন্য হতে পারে এক প্রাকৃতিক নিরাময়।