দৈনন্দিন জীবনের একটি দীর্ঘ সময় আমরা কর্মক্ষেত্রে অতিবাহিত করি। পারিবারিক জীবনের মতোই এই কর্মক্ষেত্রও আমাদের জীবনে বিশেষ গুরুত্ব রাখে। কেবল কাজের বিনিময়ে অর্থ উপার্জনই এই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়। প্রতিনিয়ত আমাদের সহকর্মীদের সঙ্গে কথাবার্তা হয়, যাদের মধ্যে কেউ হয়তো বন্ধুও হয়ে ওঠে। তবে এটা কখনোই ভোলা উচিত নয় যে তারা আপনার সহকর্মী। তাই তাদের সঙ্গে কোন কথাগুলো শেয়ার করা উচিত নয়, তা জেনে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।
১. আর্থিক অবস্থা:
আপনার আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে অফিসে কখনোই কারো সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করবেন না। আপনার মাসিক আয় কত, সংসার চালাতে কত টাকা খরচ হয়, কোথায় কত টাকা সঞ্চয় আছে – এই ধরনের ব্যক্তিগত আর্থিক তথ্য সহকর্মীদের সাথে শেয়ার করা উচিত নয়। আর্থিক বিষয় একান্তই ব্যক্তিগত, এবং কর্মক্ষেত্রে এর আলোচনা অপ্রয়োজনীয় ও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
২. পরনিন্দা ও পরচর্চা:
কাজের পরিবেশে সকলের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা জরুরি, তবে এটা স্বাভাবিক যে কিছু সহকর্মীকে আপনার অপছন্দ হতে পারে বা কারো সাথে মনোমালিন্য ঘটতে পারে। কিন্তু সেই অপছন্দের কথা বা কারো সমালোচনা অন্য সহকর্মীর কাছে করবেন না। এমনকি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, বস বা ম্যানেজারকে নিয়েও কোনো নেতিবাচক আলোচনা এড়িয়ে চলুন। কর্মক্ষেত্রে পরনিন্দা ও পরচর্চা আপনার ভাবমূর্তি নষ্ট করতে পারে এবং সহকর্মীদের মধ্যে অবিশ্বাস সৃষ্টি করতে পারে।
৩. রাজনীতি নিয়ে আলোচনা:
আপনার রাজনৈতিক বিশ্বাস বা আদর্শ আপনার সহকর্মীর সাথে নাও মিলতে পারে। দুজনের চিন্তাভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু এই ধরনের সংবেদনশীল বিষয় কর্মক্ষেত্রে আলোচনা করা উচিত নয়। এতে পেশাদার সম্পর্কে তিক্ততা আসতে পারে এবং কর্মক্ষেত্রে একটি অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হতে পারে। একই নীতি ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
৪. নতুন চাকরির সন্ধান:
যদি আপনি বর্তমানে নতুন চাকরির সন্ধান করছেন, তবে এই তথ্যটি ভুলেও আপনার অফিসের কোনো সহকর্মীকে জানাবেন না। সহকর্মী যতই আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী হোক না কেন, এই ধরনের খবর খুব দ্রুত কর্মক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। আর কোনোভাবে এই কথা আপনার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কানে গেলে, আপনার বর্তমান কর্মজীবনে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তাই নতুন চাকরির খোঁজ সম্পূর্ণরূপে গোপন রাখুন।
৫. সম্পর্কের টানাপোড়ন:
আপনার ব্যক্তিগত জীবনে কী ঘটছে, কার সাথে আপনি ডেটে যাচ্ছেন, আপনার দাম্পত্য জীবন কেমন চলছে – এই ধরনের ব্যক্তিগত এবং সংবেদনশীল কোনো তথ্য সহকর্মীদের সাথে আলোচনা করা উচিত নয়। হতেই পারে আপনার সরল বিশ্বাসে বলা কথা নিয়ে আপনার পিছনে সমালোচনা হচ্ছে বা আপনার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে মশকরা করা হচ্ছে। তাই কর্মক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে আলোচনা সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলুন।
কর্মক্ষেত্র একটি পেশাদার জায়গা, এবং এখানে ব্যক্তিগত তথ্যের আদান-প্রদান আপনার কর্মজীবনের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। সহকর্মীদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখুন, তবে ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করার ক্ষেত্রে সর্বদা সতর্ক থাকুন। নিজের পেশাদারিত্ব রক্ষা করুন এবং কর্মক্ষেত্রে একটি সুস্থ ও ইতিবাচক পরিবেশ বজায় রাখুন।