ওজন কমানোর ভুল ধারণা ভাঙুন, না খেয়ে ওজন কমানো মানেই বিপদ! জেনে নিন বিশেষজ্ঞের সঠিক পথনির্দেশ

দ্রুত ওজন কমানোর তাড়না অনেকের মধ্যেই দেখা যায়, এবং এই প্রচেষ্টায় অনেকে না খেয়ে থাকার মতো ভুল পদ্ধতিও বেছে নেন। তবে বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়ে বলছেন, এটি কেবল ভুলই নয়, বরং স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ওজন কমানোর জন্য প্রয়োজন ধৈর্য এবং সঠিক পদ্ধতির অনুসরণ।

আপনার ওজন বাড়ছে কেন?
বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী দেহের একটি স্বাভাবিক ওজনের মাত্রা থাকে। কিন্তু অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, দীর্ঘক্ষণ টিভি বা কম্পিউটারের সামনে বসে থাকা, মোবাইল ফোন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অতিরিক্ত ব্যস্ততা—এসব কারণে কায়িক পরিশ্রম কমে যায়। পর্যাপ্ত হাঁটার সুযোগের অভাবও ওজন বৃদ্ধির একটি বড় কারণ। অনেকে আবার সারা দিন না খেয়ে দিনে দু-একবার খান, যার ফলে একবারে খাবারের পরিমাণ অনেক বেশি হয়ে যায় এবং দেহে অতিরিক্ত ক্যালরি প্রবেশ করে।

এছাড়াও, জাঙ্ক ফুড এবং ফাস্ট ফুড জাতীয় খাদ্যে মাত্রাতিরিক্ত তেল, চর্বি, মসলা ও লবণ থাকায় দ্রুত ওজন বাড়ে এবং শরীরের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানের ঘাটতি দেখা দেয়।

অতিরিক্ত ওজনের জটিলতা:
ওজন বেশি বাড়লে শরীরে ইনসুলিন নামক হরমোনের নিঃসরণ কমে যায়, যার ফলে অল্প বয়সেই ডায়াবেটিস দেখা দিতে পারে। অতিমাত্রায় দুশ্চিন্তা, ফ্যাটি লিভার, কোলেস্টেরল বৃদ্ধির কারণে হার্ট ও স্ট্রোকের মতো মারাত্মক অসুখের ঝুঁকিও বাড়ে। তবে আশার কথা হলো, শুধু ওজন কমিয়ে এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে এসব শারীরিক জটিলতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

ওজন কমাতে কী করবেন, কী করবেন না: বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
যা করবেন না:

সারা দিনে এক-দুইবার খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করুন: এতে একবারে বেশি খাবার খাওয়া হয় এবং দেহে অতিরিক্ত ক্যালরি প্রবেশ করে, যা মুটিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। নিয়মিত বিরতিতে অল্প অল্প করে খান।

শুধুমাত্র সবজি ও ফল খেয়ে ওজন কমানোর চেষ্টা করবেন না: প্রোটিন জাতীয় খাদ্য সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে শুধু সবজি ও ফল খেয়ে ওজন কমানোর চেষ্টা করলে তা সুষম বা ব্যালান্স ডায়েট হয় না। এর ফলে নানা শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে।

জাঙ্ক ফুড ও ফাস্ট ফুড খাবেন না: এগুলোতে মাত্রাতিরিক্ত তেল, চর্বি, মসলা ও লবণ থাকায় দ্রুত ওজন বাড়ে এবং শরীরের প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানের ঘাটতি দেখা দেয়।

প্রয়োজন ছাড়া বেশি রাত জাগবেন না: রাত জাগলে ক্ষুধা লাগে এবং বেশি খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে, যার ফলে ওজন বাড়ে। পর্যাপ্ত ঘুম ওজন কমানোর জন্য জরুরি।

কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার একেবারে বাদ দেবেন না: হঠাৎ করে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার বন্ধ করে দিলে মাথাব্যথা, শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট, দুর্বলতা, অবসাদ, চামড়ায় র‍্যাশ, কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া দেখা দিতে পারে। পরিমিত পরিমাণে স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করুন।

সকালের নাশতা বাদ দেবেন না: সকালের নাশতা দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার। এটি বাদ দিলে দুপুরের খাবারে বেশি খেয়ে ফেলার প্রবণতা তৈরি হয়। সকালের নাশতার তিন-চার ঘণ্টা পর হালকা নাশতা করুন।

যা করবেন:

নিয়মিত সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন: আপনার বয়স, পেশা ও লিঙ্গ অনুসারে প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার বেছে নিন।

পর্যাপ্ত কায়িক পরিশ্রম করুন: নিয়মিত হাঁটা, ব্যায়াম বা যেকোনো শারীরিক কার্যকলাপ ওজন নিয়ন্ত্রণে অপরিহার্য।

রুটিন টেস্ট করান: ওজন কমানোর আগে কিছু রুটিন টেস্ট যেমন রক্তে সুগারের মাত্রা, কোলেস্টেরল, ক্রিয়েটিনিন, ইউরিক অ্যাসিড ইত্যাদি পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে নিন।

চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন: পরীক্ষার ফলাফল এবং আপনার শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী একজন চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ গ্রহণ করুন। তারা আপনাকে একটি ব্যক্তিগতকৃত ডায়েট ও এক্সারসাইজ প্ল্যান তৈরি করে দিতে পারবেন।

ওজন কমানো একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। সঠিক জ্ঞান, ধৈর্য এবং বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে চললে সুস্থ উপায়ে ওজন কমিয়ে একটি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া সম্ভব।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy