সামান্য কাটা-ছেঁড়া কিংবা সর্দি কাশির সমস্যায় বেশিরভাগের মানসিকতা হল আগে অ্যালোপ্যাথি ওষুধ খেয়ে নেওয়া। বেশিরভাগ সময়ই অনেকে প্রয়োজন ছাড়াই ওষুধ খান, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা না ভাবেই। এমনও অনেক মানুষ আছেন যাঁরা নিজের চিকৎসা নিজেই করেন। চিকিৎসকেরা কিন্তু এই বিষয়ে বার বার সাবধান করেন। প্রয়োজন হলে অ্যান্টিবায়োটিক অবশ্যই খাবেন। কিন্তু সামান্য কারণে নিয়মিত ভাবে এই ওষুধ খাওয়া অভ্যাস করলে অনেক সময় পার্শেবপ্রতিক্রিয়া এমনই হয় যে তা হাতের নাগালের বাইরে চলে যায়। অথচ আমাদের হাতের সামনেই থাকে এমন কিছু উপাদান যা অত্যন্ত স্বল্প দামেই পাওয়া যায়। এখনও গ্রামের দিকে বিনামূল্যেই খোঁজ মেলে এই পাতার। অনেকেই হয়ত এি সঠিক ব্যবহার জানেন না। ভেষজ এই পাতাটির নাম থানকুনি পাতা।
থানকুনি পাতার সঙ্গে আমাদের পরিচয় অনেক দিনের। প্রাচীন কাল থেকেই অআর্য়ুবেদ শাস্ত্রে ব্যবহার হয়ে আসছে এই পাতা। এখনও ওষুধ তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয় এই পাতার নির্যাস। পুকুরপাড়ে বা জলাশয়ের ধারে এই পাতা প্রচুর পরিমাণে জন্মায়। এছাড়াও বাড়িতে একবার লাগালে এই গুল্ম সহজে মরে না। থানকুনি পাতায় এমন কিছু গুণ রয়েছে, যা নিয়মিত খেতে পারলে একাধিক উপকার পাওয়া যায়। পেটের অনেক গুপ্ত রোগ সেরে যায় এই পাতার গুণেই। শরীর সুস্থ থাকার পাশাপাশি ঘটে বুদ্ধির বিকাশও। স্বাদে একটু তেতো হলেও ছোট থেকেই বাচ্চাদের এই পাতা বেটে খাওয়ানো অভ্যাস করাতে পারেন।
এছাড়াও থানকুনি পাতার আরও যে সব স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে-
পেটের রোগ নির্মূল করতে থানকুনির বিকল্প নেই। নিয়মিত খেলে যে কোনও পেটের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। একই সঙ্গে পেট নিয়ে কোনও দিনও সমস্যায় ভুগতে হয় না। অ্যাসিয়াটিকোসাইড (Asiaticoside) নামের একটি উপাদান রয়েছে থানকুনি পাতায়, যা হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়। সেই সঙ্গে পেটের আলসার থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। যাঁরা ডায়ারিয়ার সমস্যায় ভুগছেন কিংবা রক্ত আমাশায় ভুগছেন তাঁদেরও থানকুনি পাতা খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
পড়ে গিয়ে ছড়ে গেলে বা কেটে গেলে রক্ত বন্ধ করতে কাজে লাগানো হয় এই পাতা। থানকুনি পাতা (Thankuni Leaf) থেঁতো করে কাটা জায়গায় লাগাতে পারলে রক্তপড়া বন্ধ হয়ে যায়। এই পাতায় রয়েছে Saponins নামে একটি উপাদান, যা ক্ষতস্থানে রক্তের প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। যে কারণে ক্ষত শুকিয়ে যেতে সময় লাগে না। ক্ষতস্থানে কোনও ধরনের সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কাও কমে।
শুধু পেটই নয়, আলসার, এগজিমা, হাঁপানি-সহ নানা চর্মরোগ সেরে যায় থানকুনি পাতা খেলে। ত্বকেও জেল্লা বাড়ে। ত্বকের ওজ্জ্বল্য বাড়ায় থানকুনি পাতা ৷ যাঁরা অনিদ্রাজনিত সমস্যায় ভুগছেন তাঁরাও রোজ থানকুনি পাতা বেটে শরবত বানিয়ে খেতে পারলে উপকার পাবেন। কারণ এতে কর্টিসোল হমোন ঠিকমতো কাজ করে।