রান্নাঘরের এক অপরিহার্য উপাদান আদা, যার গুণাগুণের তালিকা বেশ দীর্ঘ। যুগ যুগ ধরে এটি হজমের সমস্যা, সর্দি-কাশি এবং বমি বমি ভাবের মতো সাধারণ অসুস্থতার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, আর্থ্রাইটিস, হাঁপানি, অ্যালার্জি, ক্যানসার, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং মাইগ্রেনের মতো প্রদাহজনিত রোগেও আদার কার্যকারিতা রয়েছে। তবে অনেকেই দ্বিধায় ভোগেন যে টাটকা আদা বেশি উপকারী নাকি শুকনো আদা? আসুন জেনে নেওয়া যাক এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত।
অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের কার্যকারিতা
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, শুকনো আদায় পলিফেনল জাতীয় অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের মাত্রা বেশি থাকে। এর কারণ হলো, শুকানোর প্রক্রিয়ায় আদা থেকে জলীয় উপাদান বেরিয়ে যাওয়ার ফলে পলিফেনলের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। ফলে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট হিসেবে শুকনো আদা তুলনামূলকভাবে বেশি কার্যকর। তবে, আদা গরম করলে বা রান্না করার সময় তাপের সংস্পর্শে জৈব রাসায়নিক পরিবর্তনের কারণে এই অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট কিছুটা শক্তি হারায়। অন্যদিকে, কাঁচা আদায় পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকে।
জীবাণুনাশক ক্ষমতা
আদায় বিভিন্ন ‘এসেনশিয়াল অয়েল’ বা অপরিহার্য তেল পাওয়া যায়, যার মধ্যে জীবাণুনাশক গুণ রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কাঁচা আদার জীবাণুনাশক ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে বেশি। কাঁচা আদা শ্বাসকষ্টের সমস্যা সৃষ্টিকারী জীবাণু এবং বিভিন্ন ছত্রাকঘটিত সমস্যা প্রতিরোধে খুবই উপযোগী। তবে সিউডোমোনাস জাতীয় জীবাণুর বিরুদ্ধে শুকনো আদা বেশি কার্যকর বলে প্রমাণ মিলেছে।
বমি ভাব কমাতে আদার ভূমিকা
আদার তীব্র স্বাদের জন্য মূলত জিঞ্জেরল এবং শোগাওল নামক দুটি পলিফেনল গ্রুপ দায়ী। এই দুটি উপাদান অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট হিসেবে এবং বমিভাব কমাতেও বেশ কার্যকর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জিঞ্জেরল এবং শোগাওল হজম প্রক্রিয়াকে উদ্দীপিত করে, পাকস্থলীর পেশীকে সতেজ রাখে এবং কিছু নিউরোট্রান্সমিটার ব্লক করতে সাহায্য করে, যা বমি বমি ভাব কমাতে সহায়ক। কাঁচা আদাতে জিঞ্জেরলের পরিমাণ বেশি থাকে, অন্যদিকে শুকনো আদাতে শোগাওলের পরিমাণ বেশি।
সব মিলিয়ে বলা যায়, কাঁচা ও শুকনো উভয় প্রকার আদাই শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী এবং উভয়েরই নিজস্ব কিছু বিশেষ গুণাগুণ রয়েছে। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী যেকোনো ধরনের আদা ব্যবহার করতে পারেন।