অতিরিক্ত রাগের সমস্যা এখন অনেকের জীবনেই একটি বড় সমস্যা। শুধু মানসিক চাপই নয়, রাগ শারীরিক বিভিন্ন গুরুতর রোগেরও কারণ হতে পারে। ২০১৮ সালের গ্যালাপের ‘গ্লোবাল ইমোশনস রিপোর্ট’ অনুযায়ী, বিশ্বের ২২ শতাংশ মানুষ অতিরিক্ত রাগের সমস্যায় ভোগেন। যখন রাগ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন তা আমাদের শরীর ও মনে নানা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
রাগ ও চিৎকারের কারণে শরীরে যা ঘটে:
আমরা যখন রেগে চিৎকার করি, তখন আমাদের হৃদস্পন্দন হঠাৎ বেড়ে যায়। এর সঙ্গে রক্তচাপও বৃদ্ধি পায়। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, রেগে কথা বললে ত্বক ও মুখ লাল হয়ে যায়, শিরা ফুলে ওঠে এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের গতিও বেড়ে যায়। হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসে। শরীরের এই হঠাৎ পরিবর্তনগুলো গুরুতর বিপদের কারণ হতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়:
গবেষণায় দেখা গেছে, একবার রেগে চিৎকার করলে প্রায় ৬ ঘণ্টার জন্য শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। যারা খুব সহজেই রেগে যান, তারা প্রায়শই অসুস্থ থাকেন, কারণ তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল। অতিরিক্ত রাগী মানুষেরা অজান্তেই নিজেদের শারীরিক রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলেন।
মানসিক ও শারীরিক অন্যান্য সমস্যা:
রাগের সময় ‘স্ট্রেস রাসায়নিক’ আমাদের মস্তিষ্ক ও শরীরে ছড়িয়ে পড়ে, যা মেটাবলিজমেও পরিবর্তন আনে। এর ফলে অতিরিক্ত রাগী মানুষেরা নিয়মিত মাথাব্যথা, উদ্বেগ, অনিদ্রা ও হজমের সমস্যায় ভুগতে পারেন। এছাড়াও, অ্যাকজিমা ও বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগও দেখা দিতে পারে। সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো, এমন মানুষের স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।
মস্তিষ্কের উপর প্রভাব:
রেগে গিয়ে চিৎকার করলে বা কঠোর শব্দ ব্যবহার করলে তা মস্তিষ্কের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে। অনেক সময় রাগের মাথায় বলা কথা পরবর্তী সময়ে মানুষ সম্পূর্ণ ভুলে যান।
শিশুদের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব:
গবেষণায় দেখা গেছে, ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের সামনে বাবা-মায়ের চিৎকার করলে তাদের মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। এমন শিশুরা বড় হলে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার সমস্যায় ভুগতে পারে, যেমন পিঠে, ঘাড়ে ব্যথা ও বাতের সমস্যা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিজেকে শান্ত রেখে যুক্তি দিয়ে কথা বলার মাধ্যমেই কোনো বিতর্কে জয়ী হওয়া সম্ভব। চিৎকার করা বা অতিরিক্ত রাগ দেখিয়ে নয়, বরং冷静ভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করাই বুদ্ধিমানের কাজ।