সুপারফুড’ ডিম, প্রতিদিন সকালে একটি, আর ছোট-বড় সব রোগ বশ! গবেষণায় মিলল চাঞ্চল্যকর তথ্য

প্রাণিজ আমিষের জগতে ডিমের স্থান সর্বাগ্রে। সহজলভ্যতা আর অতুলনীয় পুষ্টিগুণের মেলবন্ধন একে করে তুলেছে সর্বজনীন ‘সুপারফুড’। কিন্তু সম্প্রতি এক বিখ্যাত জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা ডিমের পুষ্টিগুণকে নিয়ে এসেছে নতুন এক মাত্রায়! বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে নিয়মিত মাত্র একটি বা দুটি ডিম খেলে দেহের অন্দরে এমন কিছু অভাবনীয় পরিবর্তন ঘটে, যা ছোট-বড় বহু রোগকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারে। সেই সঙ্গে মেলে আরো অনেক অলৌকিক উপকারিতা।

একটি বড় সেদ্ধ ডিমে রয়েছে প্রায় ৭০ ক্যালরি পুষ্টি, ৬ গ্রাম উচ্চ মানের প্রোটিন। ডিমের সাদা অংশটুকু উচ্চ মানের জৈব আমিষের উৎস, আর কুসুমে আছে স্নেহ পদার্থ, লৌহ ও বিভিন্ন জরুরি ভিটামিন। শিশু থেকে বৃদ্ধ – সব বয়সের মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে ডিমের জুড়ি মেলা ভার।

সকালের ডিম: শরীরের জন্য এক মহৌষধ

গবেষণায় হাজার হাজার মানুষের উপর পরীক্ষা চালিয়ে বিজ্ঞানীরা ডিমের যে বহুমুখী উপকারিতা তুলে ধরেছেন, তা এককথায় চমকপ্রদ:

১. চুল পড়া কমায়, ঝলমলে চুলের রহস্য: ভিটামিন এ ও ই-এর প্রাচুর্য ডিমকে চুলের জন্য বিশেষ উপকারী করে তোলে। এই উপাদানগুলো চুলের গোড়ার পুষ্টির ঘাটতি দূর করে চুল পড়ার হার কমাতে সাহায্য করে, ফলে চুল হয়ে ওঠে আরও মজবুত ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল।

২. দৃষ্টিশক্তির জাদুকর: ডিমে থাকা লুয়েটিন এবং জিয়াক্সেনথিন নামক দুটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আলট্রাভায়োলেট রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে চোখকে রক্ষা করে। এটি রেটিনার কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে ছানি সহ একাধিক চোখের রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।

৩. অ্যামাইনো অ্যাসিডের অফুরন্ত ভান্ডার: শরীরের সচলতা এবং সঠিক কার্যকারিতার জন্য অ্যামাইনো অ্যাসিড অপরিহার্য। ডিমে এই উপাদানটি প্রচুর পরিমাণে থাকে, যা দৈনিক পুষ্টি চাহিদা পূরণে সাহায্য করে শরীরকে সুস্থ ও সক্রিয় রাখে।

৪. ত্বকের সৌন্দর্য ও লিভারের স্বাস্থ্য: ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের উপস্থিতি ডিমকে ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে কার্যকরী করে তোলে। পাশাপাশি, এটি লিভারের কর্মক্ষমতা বাড়াতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে। অর্থাৎ, মাথা থেকে পা পর্যন্ত সার্বিক সুস্থতার জন্য ডিম একাই একশো!

৫. অ্যানিমিয়ার প্রকোপ হ্রাস: শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতার মতো রোগ দেখা দেয়। ডিমে থাকা আয়রন লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন বাড়িয়ে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে, ফলে অ্যানিমিয়ার প্রকোপ কমে।

৬. ওজন নিয়ন্ত্রণে ম্যাজিক: অবাক হলেও সত্যি, ডিম খেলে ওজন বাড়ে না, বরং কমতে পারে! সকালে ডিম খেলে পেট দীর্ঘক্ষণ ভরা থাকে, ফলে বার বার খিদে পায় না এবং অস্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্স খাওয়ার প্রবণতা কমে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সকালে ক্যালরির চাহিদা পূরণ করে, তাদের সারা দিনে অতিরিক্ত ক্যালরিযুক্ত খাবার খাওয়ার ইচ্ছা থাকে না, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

৭. কোলেস্টেরল নিয়ে ভুল ধারণা ভাঙুন: অনেকেই ভাবেন, ডিম খেলে কোলেস্টেরল বাড়ে। কিন্তু এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। গবেষণায় প্রমাণিত, ডিমে থাকা ২০০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল মূলত ‘ভালো কোলেস্টেরল’ (HDL), যা শরীরের কোনো ক্ষতি না করে উল্টো উপকারে আসে। এটি খারাপ কোলেস্টেরলের (LDL) পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে।

৮. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি: ডিমে উপস্থিত সেলেনিয়াম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি থাইরয়েড হরমোনের সঠিক ক্ষরণেও ভূমিকা রাখে, ফলে সংক্রমণ এবং থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।

৯. ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধি ও স্মৃতিশক্তি জোরদার: ডিমের কোলিন নামক এসেনশিয়াল নিউট্রিয়েন্ট মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এটি স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ এবং বুদ্ধির ধার বাড়াতে সাহায্য করে। কোলিনের ঘাটতি ডিমেনশিয়া এবং অ্যালঝাইমারস সহ বিভিন্ন ব্রেন ডিজিজের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, তাই মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্যের জন্য ডিম অপরিহার্য।

১০. স্ট্রেস কমায়, মন ভালো রাখে: ডিমে প্রায় ৯ ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে, যা মস্তিষ্কে সেরাটোনিন নামক এক বিশেষ হরমোনের ক্ষরণ বাড়ায়। এই হরমোন স্ট্রেস এবং অ্যাংজাইটি কমাতে এবং নিমেষে মন ভালো করে দিতে অত্যন্ত কার্যকর।

১১. হাড় ও দাঁতের মজবুতি: ভিটামিন ডি-তে পরিপূর্ণ হওয়ার কারণে নিয়মিত ডিম খেলে হাড় এবং দাঁতের স্বাস্থ্য নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হয় না। এই ভিটামিন হজম ক্ষমতা এবং হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে, ফলে সার্বিকভাবে শরীর চাঙ্গা হয়ে ওঠে।

তাই, সুস্থ ও নিরোগ জীবন পেতে কাল সকাল থেকেই আপনার ব্রেকফাস্টের পাতে একটি করে ডিম যোগ করুন। এই ছোট পরিবর্তন আপনার জীবনে আনতে পারে এক বিরাট সুস্বাস্থ্য।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy