সম্পর্কের ভাঙনের পূর্বাভাস: পরকীয়ার লক্ষণগুলি চিনে নিন

সম্পর্কের বাঁধন কখন যে তাতে চিড় ধরে বলা মুশকিল। अचानकই একদিন দেখা যায় বিশ্বাসের স্তম্ভে ধরেছে ফাটল, খসে পড়ছে ভালোবাসার পলেস্তারা। তখন অনেক চেষ্টা করেও সেই ক্ষত আর সারানো যায় না। পরিণতিতে আসে বিচ্ছেদ আর সীমাহীন যন্ত্রণা। কিন্তু এমন কি কোনও উপায় নেই, যার মাধ্যমে আগেভাগেই সম্পর্কের এই ভাঙনের পূর্বাভাস পাওয়া যেতে পারে? হয়তো দৈনন্দিন জীবনের অভ্যাসে আমরা আমাদের সম্পর্কের দিকে ভালোভাবে নজর দিই না, আর তাই এই অপ্রত্যাশিত দুরবস্থা ঘটে। তাই সম্পর্কের শুরু থেকেই এ বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি।

আজকের কর্পোরেট জগতে পরকীয়ার ঘটনা যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। যদিও এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ আছে, কিন্তু তাতে তো মনের গভীরে যে ক্ষত তৈরি হয়, তা মোছা যায় না। তাই একটি সম্পর্ককে বাঁচাতে হলে, আগে তার ভাঙনের লক্ষণগুলি সম্পর্কে অবগত থাকা প্রয়োজন।

আসুন, সেই লক্ষণগুলি জেনে নেওয়া যাক, যা দেখে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার সঙ্গী পরকীয়ায় লিপ্ত কিনা:

১. আকস্মিক ব্যবহারে পরিবর্তন:

যদি আপনার খুব কাছের মানুষটির আচরণে হঠাৎ কোনও বড় পরিবর্তন লক্ষ্য করেন, তবে তা সন্দেহের কারণ হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যিনি আগে পারিবারিক বিষয়ে সবসময় যুক্ত থাকতেন, তিনি যদি হঠাৎ উদাসীন হয়ে যান, অথবা এর বিপরীতও ঘটতে পারে – যিনি আগে পরিবারের প্রতি তেমন মনোযোগ দিতেন না, তিনি যদি হঠাৎ অতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন, তবে বুঝতে হবে তাঁর জীবনে কোনও নতুন পরিবর্তন এসেছে। গভীর পর্যবেক্ষণের মাধ্যমেই এই ব্যবহারিক পরিবর্তনগুলি আপনার নজরে আসতে পারে।

২. সঙ্গীর সঙ্গে কম সময় কাটানো:

মূলত হতাশা, একাকীত্ব, একঘেয়েমি বা যৌন অতৃপ্তি থেকেই একজন মানুষ সম্পর্কে থাকা সত্ত্বেও নতুন সম্পর্কের দিকে আকৃষ্ট হন। তাই যদি আপনার সঙ্গী আপনার সাথে আগের চেয়ে অনেক কম সময় কাটান, তবে বুঝতে হবে এই সমস্যাগুলির মধ্যে কোনও একটি তাঁকে প্রভাবিত করছে। আর সেখান থেকেই নতুন সম্পর্কের অঙ্কুরোদগম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৩. গোপনীয়তা:

স্বাভাবিকভাবেই, কেউই তাঁদের পরকীয়া সম্পর্ক পরিবারের সামনে আনতে চান না। তাই যদি দেখেন আপনার সঙ্গী সাধারণ বিষয়গুলিও আপনার কাছ থেকে লুকাচ্ছেন, তবে তাঁর পরকীয়ায় জড়িত থাকার সম্ভাবনা প্রবল। এছাড়াও, একটি সম্পর্কের মধ্যে থেকেও অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার অপরাধবোধও অনেক সময় গোপনীয়তা বা সবকিছু লুকিয়ে যাওয়ার প্রবণতা তৈরি করে।

৪. সন্দেহজনক ফোন:

সাধারণত আপনার সঙ্গী ফোনে কার সাথে কথা বলছেন বা কোন স্বরে কথা বলছেন, তা আপনার অজানা থাকার কথা নয়। কিন্তু যদি হঠাৎ এতে পরিবর্তন আসে, তবে সন্দেহ জাগা স্বাভাবিক। যদি বিশেষ কোনও ফোন কলের সময় সঙ্গী নিচু স্বরে কথা বলেন, যাতে আপনি তা শুনতে না পান, তবে পরকীয়ার সম্ভাবনা আরও জোরালো হয়।

৫. রাত করে ফেরা বা ঘনঘন ট্রিপ:

কোনও পূর্ব পরিকল্পনা নেই, এমনকি আগে থেকেও কিছু জানানো হয়নি, অথচ আপনার সঙ্গী হঠাৎ বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে যাচ্ছেন, হয়তো অফিসের কাজের অজুহাতে। যদি এমন ঘটনা বারবার ঘটতে থাকে, তবে সন্দেহ হওয়া স্বাভাবিক। সাধারণত কাজের সময় অনুযায়ী বাড়ি ফেরার একটা নির্দিষ্ট সময় থাকে। দু-একদিন ব্যতিক্রম হতেই পারে, কিন্তু যদি নিয়মিত এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটে, তবে পরকীয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

৬. অকারণ ব্যাখ্যা দেওয়া:

যদি আপনার সঙ্গী কোনও কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই অপ্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা দিতে শুরু করেন, তবে তা সন্দেহের উদ্রেক করে। আসলে অপরাধবোধ থেকে অথবা তিনি কোনও ভুল কাজ করছেন না, তা প্রমাণ করার তাগিদেই পরকীয়ায় লিপ্ত ব্যক্তিরা এমন আচরণ করে থাকেন। তাই এই বিষয়ে আগে থেকেই সতর্ক থাকা উচিত।

৭. নিজের প্রতি বিশেষ নজর:

নিজের যত্ন নেওয়া ভালো, কিন্তু প্রত্যেক মানুষ কতটা নিজের খেয়াল রাখেন তা তাঁর কাছের মানুষজন জানেন। যদি এতে হঠাৎ কোনও পরিবর্তন আসে, তবে চিন্তার কারণ আছে। যদি দেখেন এতদিন ধরে আপনার সঙ্গী যেভাবে পোশাক পরতেন বা যা পছন্দ করতেন, তাতে দ্রুত পরিবর্তন আসছে, তবে বুঝতে হবে তাঁর মধ্যে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। সম্ভবত তিনি অন্য কারও পছন্দ দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছেন, এমন অনুমান করাই যায়।

৮. বিরক্তি ও খিটখিটে মেজাজ:

সংসারের দৈনন্দিনতা থেকে ক্লান্তি বা খারাপ মেজাজ আসতেই পারে, এবং বেশিরভাগ সম্পর্কেই এমন সমস্যা দেখা যায়। সঙ্গীরা নিজেদের মতো করে সেই সমস্যা মিটিয়েও নেন। কিন্তু যদি এর ব্যতিক্রম ঘটে, অর্থাৎ সঙ্গী যদি আপনার উপর ক্রমাগত বিরক্ত হন, খিটখিটে মেজাজ দেখান বা অকারণে রাগারাগি করেন, তবে বুঝতে হবে সম্ভবত তিনি অন্য কোনও সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন।

মোটকথা, ব্যবহারিক পরিবর্তনই এক্ষেত্রে মুখ্য সূত্র। আচার-আচরণ, রুচি, ব্যবহার এবং যৌন জীবনে যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি এবং দ্রুত হারে পরিবর্তন আসে, তবে পরকীয়ায় লিপ্ত থাকার সম্ভাবনা প্রবল। প্রতিটি সম্পর্কের সঙ্গীরা একে অপরকে যতটা গভীরভাবে চেনেন, অন্য কেউ তেমনভাবে চেনেন না। আর তাই স্বাভাবিকভাবেই একজন বুঝতে পারেন, তাঁর সঙ্গী কতটা তাঁর সাথে আছেন আর কতটা দূরে সরে গেছেন।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy