সম্পর্ক বা বিয়ে অনেকেই করেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কতজনই বা তাতে সফল হন? একটি সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পেছনে শুধু একজনের দোষ থাকে না, বরং দু’জনেরই ভূমিকা থাকে। তবে, একটি সুখের সংসার গড়ে তুলতে স্ত্রীর পাশাপাশি স্বামীর ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি স্বামী তার দায়িত্ব ও ভালোবাসা প্রকাশে ব্যর্থ হন, তবে সেই সম্পর্ক ভেঙে যেতে বাধ্য। তাই স্ত্রী ও সংসারের প্রতি গভীর ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও মনোযোগ দিতে হবে। এতে সম্পর্ক যেমন মধুর থাকবে, তেমনি আপনিও হয়ে উঠবেন একজন যোগ্য স্বামী।
দাম্পত্য জীবনকে মধুর ও সফল করতে স্বামীর ৬টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা:
১. সম্পর্ক নিয়ে পরিকল্পনা থাকতে হবে: বিয়ে হয়ে গেছে, ছেলেপুলে হয়ে গেছে, তাই বলে কি দাম্পত্য জীবন ফুরিয়ে গেছে? একদমই নয়। বরং এখনই সম্পর্কের পেছনে আরও বেশি সময় ও মনোযোগ দিতে হবে। স্ত্রী এমন কেউ নন যে চিরকাল আপনার সাথে থাকতে বাধ্য। ভালোবাসা ও যত্ন না পেলে তার মনও অন্যদিকে চলে যেতেই পারে। তাই কেবল জীবন বা কেরিয়ার নিয়ে পরিকল্পনা না করে, সম্পর্ক নিয়েও পরিকল্পনা করুন। কীভাবে দুজনে ভালো সময় কাটাবেন, কোথায় বেড়াতে যাবেন, কী উপহার দেবেন, কী বলবেন – ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে ভাবা অত্যন্ত জরুরি।
২. প্রতিদিন ভালোবাসার ভিত্তি স্পর্শ করুন: সম্পর্কের মূল ভিত্তি হলো ভালোবাসা। সেই ভালোবাসার ভিত্তি প্রতিদিন স্পর্শ করুন। তাকে জানান যে আপনি তাকে ভালোবাসেন। প্রতিদিন তার সাথে কথা বলুন, সে কেমন আছে জানতে চান। নিজের দিনলিপি, কাজের কথা বা অনুভূতি তার সাথে ভাগ করে নিন। এই ছোট ছোট বিষয়গুলো ভালোবাসার বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে তোলে।
৩. সংসারের দায়িত্ব আপনারও: সংসার শুধু স্ত্রীর একার নয়, আপনারও। সংসারের সমস্ত বড় সিদ্ধান্তগুলো দুজনে একসাথে আলোচনার মাধ্যমে নিন। যেসব ব্যাপারে আপনি একাই সিদ্ধান্ত নিতেন, সেগুলোতে স্ত্রীকে যুক্ত করুন। যেসব কাজ স্ত্রী একাই করেন, সেগুলোতে আপনি সাহায্য করুন। হোক তা রান্নাঘরের কাজ, বা সন্তানের দেখভাল – আপনার অংশগ্রহণ সম্পর্ককে সাম্য ও সম্মানের ভিত দেবে।
৪. বিশেষ মুহূর্তে বুঝতে শিখুন: মানুষ কোনো যন্ত্র নয় যে আজীবন একই রকম চলবে। মাঝে মাঝে সকলেরই একটু বিশ্রাম দরকার হয়, রোজকার জীবন থেকে একটু ‘ব্রেক’-এর প্রয়োজন হয়। এই বিরতি আমাদেরকে সম্পর্ক পরিচালনা করতে নতুন করে উজ্জীবিত করে থাকে। তাই, নিজের যখন অবসরের প্রয়োজন, তা যেমন বুঝতে শিখুন, তেমনই সঙ্গী কখন অবসর চাইছে সেটাও বুঝে নিন এবং সেই সময়ে তাকে একটু নিজের মতো থাকতে দিন। এটি একে অপরের প্রতি সম্মান ও বোঝাপড়াকে বাড়াবে।
৫. কৃতজ্ঞতা প্রকাশে কেউ ছোট হয় না: তিনি আপনার জীবনে আছেন বলেই আপনার জীবন সুন্দর, সংসার সুন্দর, এবং আপনার জীবন চমৎকার ভাবে চলছে—যদি এমনটাই আপনার অনুভূতি হয়ে থাকে, তবে কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুলবেন না। ভালোবাসার মানুষকে যত ধন্যবাদ জানাবেন, ছোট ছোট কাজের জন্য প্রশংসা করবেন, সম্পর্ক তত সুন্দর হয়ে উঠবে। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ সম্পর্কের উষ্ণতা ও গভীরতা বাড়ায়।
৬. কিছু নিয়ম তৈরি করুন: দাম্পত্য জীবনে কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। যেমন ধরুন, গোসলের পর টাওয়াল বিছানাতে ফেলে না রেখে বারান্দায় মেলে দিন, অথবা নিজের জুতো গুছিয়ে রাখুন। কীভাবে আপনাদের সংসার চলবে, সেই বিষয়ে কিছু নিয়ম দুজনে একসাথে বসে তৈরি করে নিন এবং সেগুলো মেনে চলুন। এই ছোট ছোট নিয়মগুলো মেনে চললে অনেক সমস্যাই সহজ হয়ে যাবে এবং পারস্পরিক বোঝাপড়া বৃদ্ধি পাবে।
এই সহজ অথচ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাগুলো পালন করার মাধ্যমে একজন স্বামী তার দাম্পত্য জীবনকে কেবল মধুরই নয়, চিরস্থায়ী সুখের আশ্রয়স্থল হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন।