ফেসবুক বর্তমান যুগে একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এর মাধ্যমে ছবি, ভিডিও, মন্তব্য ও স্ট্যাটাস মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে। অনেকের কাছে ফেসবুক এখন নেশার মতো, এটি ছাড়া যেন দিন কাটানোই দায়।
তবে সম্প্রতি একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে – বহু বাবা-মা তাদের সন্তানের ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে নিয়মিত পোস্ট করছেন। মনোবিজ্ঞানীরা এবং শিশু সুরক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই অভ্যাস মোটেও নিরাপদ নয়, বিশেষত কন্যা শিশুদের ক্ষেত্রে।
মেয়ে শিশুর ছবি পোস্ট করার ক্ষেত্রে অভিভাবকদের আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে। আপনি হয়তো আপনার মেয়ের নাচ, গান, খেলাধুলা বা মিষ্টি কথা বলার ভিডিও আনন্দ করে শেয়ার করছেন। কিন্তু মনে রাখবেন, ইন্টারনেটের জগৎ বিশাল এবং এখানে সকলের মানসিকতা এক নয়। সামান্য অসাবধানতাও আপনার সন্তানের জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, ফেসবুকে শেয়ার করা আপনার সন্তানের ছবি ও ভিডিও অন্যদের মনোযোগ আকর্ষণ করে। অনেকে হয়তো আপনার সন্তানের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং আপনার পোস্টে লাইক বা কমেন্ট করেন। তবে এটাই ক্ষতির কারণ হতে পারে। অনেক সময় বাবা-মায়েরা নিতান্ত আনন্দ থেকেই শিশুর প্রতিদিনের কর্মকাণ্ডের ছবি (এমনকি স্নানের ছবিও) পোস্ট করেন, যা মোটেও উচিত নয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে কাজগুলো আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে, আমরা সেগুলোর প্রতি আরও বেশি মনোযোগী হই। শিশুদের স্পর্শকাতর ছবি, ভিডিও বা স্টোরি নিয়মিত পোস্ট করার প্রবণতা কিছু অভিভাবকের মধ্যে দেখা যায়। তারা পারিবারিক আনন্দ বন্ধুদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চান। শিশুদের পোস্টগুলো অনেক সময় বেশি জনপ্রিয়ও হয়। তবে এসব পোস্ট থেকে শিশুর প্রতি নানাবিধ নেতিবাচক অনুভূতি তৈরি হতে পারে।
সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হলো, শিশুদের এই ব্যক্তিগত ছবি পেডোফিলিক ব্যক্তিদের (যারা শিশুদের প্রতি যৌন আকর্ষণ বোধ করেন) নজরে আসতে পারে।
এ বিষয়ে মার্কিন সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন মেম্বার ডা. মো. সাঈদ এনাম (সাইকিয়াট্রিস্ট) যুগান্তরকে বলেন, শিশুদের ছবি ফেসবুকে দেওয়া একদমই ঠিক নয়। আর যদি নিতান্তই দিতে হয়, তবে ছবিতে স্টিকার ব্যবহার করা যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, শিশুরা যদি তাদের নিজেদের ছবি অন্যের ওয়ালে দেখে বা কোনো খারাপ মন্তব্য পড়ে, তবে তাদের মানসিক সমস্যা হতে পারে। এই সমস্যাকে পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (পিটিএসডি) বা বিপর্যয় পরবর্তী মানসিক চাপজনিত রোগ বলা হয়।
এছাড়াও, স্পর্শকাতর ছবি থেকে শিশুর প্রতি অনেকের নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হতে পারে, যা শিশুর জন্য অত্যন্ত বিপদজনক।
সন্তানের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করার আগে কিছু বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখা উচিত:
১. শিশুর ঘর থেকে স্কুলে যাওয়া-আসা, স্নানের ছবি, কথা বলা, গান বা নাচের ভিডিও সরাসরি পোস্ট করা উচিত নয়।
২. শিশুকে আদর করার ছবি বা শিশু যত ছোট হোক, তার শরীরের ব্যক্তিগত অংশ প্রকাশিত হয় এমন ছবি পোস্ট করা থেকে বিরত থাকুন।
৩. অন্যের শিশুর ছবি পোস্ট করার আগে অবশ্যই তাদের অনুমতি নিন।
আপনার সন্তানের নিরাপত্তা আপনার হাতে। সামান্য সচেতনতা এবং সতর্কতা আপনার সন্তানের ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত রাখতে পারে। তাই আজ থেকেই নিজের ফেসবুক ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরও বেশি দায়িত্বশীল হন।